সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরায় জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক ভাবে সবচেয়ে দমন ও নির্যাতনের শিক্ষার হয়েছে জামায়াত ইসলামি বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দরা।
এরপরও আমরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। আমরা দেশের মাটিতে আছি। আমাদের আর ধোর্য্যরে পরীক্ষা নিবেন না। আপনারা দুরে বসে মাঝে মাঝে সুড়সুড়ি দিচ্ছেন আর ভাবছেন জনগণ আপানদের ফাঁদে পা দিবে। তিনি আরো বলেন, সাতক্ষীরার মত দেশের কোন জেলা এত বেশি রক্ত দেয়নি। সেজন্য সাতক্ষীরা জামায়াত ইসলামের কাছে এক অন্যান্য জেলা।
আল্লাহ তালার মেহেরবানী সুজলা, সুফলা দেশ মানুষ খুবই কম পায়। কিন্তু বাংলাদেশ তা পেয়েছে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা এই সম্পদের কাজে লাগাতে পারিনি। কিন্তু যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশের সম্পদ লুট করেছেন। এর আগে আমি এক সময় সাতক্ষীরায় এসেছিলাম তখনই দেখেছিলাম সাতক্ষীরায় কেমন উন্নয়ন হয়েছে। তারা সাতক্ষীরার উন্নয়ন করেনি বরং মানুষকে পঙ্গু বানিয়ে তাদের দাশে পরিণত করেছেন। তারা এ জেলার মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করে তাদের ইজ্জতের উপর হাত দিয়েছিল। বিগত দিনে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল সাতক্ষীরার। শুধু আল্লাহর পক্ষ নেওয়ায় এ জেলার অবস্থা যদি এমন হয় দুনিয়া ও আখিরাতে এই জেলার সম্মান বাড়িয়ে দিও। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে মানুষ চাইলেও অধিকার পাবে না চাইলেও তার অধিকার পেয়ে যাবে। আমরা লক্ষ শিক্ষিত বেকারের মিছিল দেখতে চাই না। আমাদের যুবকেরা সম্পদে পরিণত হবে। মূল্যহীন সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়া হবে না। তাদের শিক্ষা শেষে যেন মানুষ ও দুনিয়ার কল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে এমন শিক্ষা চাই। শিক্ষা নিয়ে মানুষ যেনো মানুষ হয়। আমরা এমন দেশ চাই যেখানে নারীরা ঘরে, কর্মস্থলে, রাস্তায় সুরক্ষিত থাকবে। তারাও দক্ষতার সাথে দেশের ভূমিকা রাখবে।
তিনি নবী করিম (স.) এর ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, নবীজি নারীদের দিয়ে সর্বচ্চ কঠিন কাজ যুদ্ধ ক্ষেত্রেও সুযোগ দিয়েছেন। তাই নারীরা মর্যাদার সাথে তারা সম্মান পাবে। ইসলামের প্রতিক্ষরা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে। আমরা ক্ষমতায় গেলে সবাইকে বোরকা পড়িয়ে দিব। কিন্তু এটি ভুল ব্যাখ্যা। ইসলাম কায়েম হলে মুসলিম নারীরা পর্দা করবে। এদেশে শুধু মুসলমান বাস করে না। এখানে হিন্দু, বৈদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই বসবাস করে। এখানে কোন মানুষকে জোর করা হবে না। আমরা এমন দেশ চাই যেখানে মসজিদ, মন্দির বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কেউ পাহারা দেবে না। সবাই শান্তিপূর্ণ ও স্বস্থিতে নিজের ধর্ম পালন করবে। আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু আমাদের এই সম্প্রতির বাগানে ভূতুম পেঁচার আবিভাব হয়। আমরা সেই সুযোগ দেব না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের যে পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে তারা যদি এক সপ্তাহ কাজ বন্ধ করে দেয় আমরা কেউ ঘর থেকে বের হতে পারব না। তাই আমি তাকে সম্মান জানায়। আমাদের দেশের রিক্সা চালককে আমি সেলুট জানাই, তিনি যদি না থাকতেন আমি আপনি সঠিক সময়ে গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে পারতাম না। এদেশের মানুষ তার পেশার জন্য সম্মান পাবে না সে একজন সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সম্মানের চোখে বাঁচবে। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই এ জন্য জাতীয় স্বার্থে ঐক্য দরকার। যেখানে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ মর্যদা পাবে। তিনি উল্লেখ করে বলেন, এই ২০২৪ শে স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। স্পষ্ট মনে আছে ২০০৬ সালের ২৮ এ অক্টোবর ঢাকায় লগি-বৈঠা নিয়ে নেতাকর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মম ভাবে মানুষ হত্যা করা হয়। হত্যার পর সেই লাশের উপর নৃত্য করে ছিল তারা। সেই দিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। যা ২০২৪ সালে সেই পথ আবারও ফিরে এসেছে। এর মাঝে অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। ঢাকার পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারদের খুন করা হয়েছে। এছাড়া জামায়াত ইসলামির নেতাকর্মীদের জেলায় জেলায় খুন করা হয়েছে। ১১ জন শীর্ষ নেতাকে বিচারের নামে খুন করা হয়েছে। এই খুনের প্রতিবাদ যারা করেছে তাদের গ্রামে গ্রামে খুন করা হয়েছে। যার মধ্যে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরায়। এরপর পাশ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলায়। চলতি বছরে পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশকে খুনের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। তাদের দাবি ছিল কোটা সংস্কারের। কোটা বাতিলের জন্য নয়। কোটার নামে জাতীর সাথে তামাশা তা মেনে নেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে মানুষের দেওয়া টাকা দিয়ে কেনা অস্ত্র দিয়ে একদিকে সরকারি বাহিনী অন্য দিকে তাদের দলীয় গুন্ডাদের মাঠে নামিয়ে দেওয়া হল। উভয় পক্ষের আঘাতে দেড় হাজারের কম বেশি আদম সন্তান জীবন হারিয়েছে। জালিমের জুলুমে যারা বিদায় নিয়েছেন তাদের আত্নার শান্তি ও পরিবারগুলোর সম্মান বাড়িয়ে দেন সেই দোয়া করি। যারা পঙ্গু হয়েছেন তাদের জীবনকে গতিশীল করুক। আমরা এই বাংলাদেশকে প্রাণ উজাড় করে ভালবাসতে চাই। আমাদের উপর জুলুম হয়েছে দেশ ছেড়ে পালাইনি। আমরা আমার আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। এমন দেশে আমাদের সৃষ্টি করেছে। আমরা এই দেশকে ভালবেসে দুনিয়ার বুকে একটি শ্রেষ্ট দেশ হিসাবে পরিচিত করতে চাই। এই দেশের দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। আমরা জীবন দিব কিন্তু এদেশের এক ইঞ্চি মাটি অন্য কাউকে দখল করতে দেব না। আল্লাহতালা আমাদের শক্তি দান করুক। ২৪ শে যেসব যুবক যুবতী বুক চিতিয়ে রাস্তায় নেমেছে তাদের কবুল করুন। এমন যুবক, যুবতী আমরা বার বার চাই যারা দেশেকে আগলে রাখবে। আগমীর বাংলাদেশ এই যুকদের হাতে তুলে দিতে চাই। আমাদের সন্তানদের হাতে নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দিব। কিন্তু আকাশের কালো শকুন মাটিতে নামতে চাই। কিন্তু তাদের মাটিতে নামতে দেওয়া হবে না। তারা বলেছিল সরকার পতন হলে কয়েক লক্ষ মানুষ খুন হবে তা কি হয়েছে। জাতি অনেক বিবেকবান তারা তা করতে দেয়নি। বার বার আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। দেশে মানুষ অনেকে বিদেশে বসে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বিদেশের মাটিতে বসে যারা এদেশের অন্যায় নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন তাদের পরিবারের উপর কি নির্যাতন করেছেন তা কারোর জানা নয়। আমরা আল্লাহকে ভালবাসি আর তারই খুশি করার জন্য কাজ করে যাব। শনিবার ৩০ নভেম্বর দুপুর ২টায় সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
জেলা আমীর অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ আতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম।
এর আগে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে ডাক্তার, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন।
রাতদিন সংবাদ/ এহসান জামিল-১০