অবশেষে যশোর শহরের গাড়িখানা সড়কের বহুল আলোচিত পুলিশের দাবি করা সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হয়েছে। এখন চলছে মালিকানার গেজেট প্রকাশের কাজ। মাস দুয়েকের মধ্যে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে যশোর শহরের গাড়িখানায় এক একর ২০ শতক জমি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে পুলিশ প্রশাসনের টাগ অব ওয়ার চলে আসছিল। জমিটি খাস খতিয়ানের হলেও পুলিশ সেটি মানছিল না। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসন মামলা করে। উচ্চ আদালতে মামলা চলাকালীন ২০১৬ সালে তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জোরপূর্বক রাতারাতি ওই জমি দখল করে নেন। তিনি সেখানে থাকা সব দোকানপাট ভেঙে মালামাল লুট করে নিয়ে যান বলে দোকান মালিকরা অভিযোগ করেন। এরপর প্রাচীর দিয়ে দখলে রাখেন। পরে সেখানে পুলিশ প্লাজা নাম দিয়ে মেলা বসান। সময়ের ব্যবধানে সেই মেলা স্থায়ী বাজারে পরিণত হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের দখল করা সম্পত্তি খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়েছে। এখন গেজেট হওয়ার অপেক্ষা। আগামী দু’মাসের মধ্যে এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হতে পারে বলে জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এই তথ্য উদ্ধার করতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয়েছে। সোমবার এই প্রতিবেদক প্রথমে যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বের দপ্তরে। সেখানে তাকে না পেয়ে তার পিএ’র শরণাপন্ন হন। পিএ তাকে পাঠান রেভিনিউ মুন্সিখানায়। সেখান থেকে পাঠানো হয় এসএ শাখায়। এসএ শাখায় যার কাছে পাঠান তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য ছিল না। তিনি পাঠান ওই শাখার হেডক্লার্ক আবুল হোসেনের কাছে। আবুল হোসেন তখন বাইরে ছিলেন। বেশকিছু সময় অপেক্ষার পর তিনি এসে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করেন।
সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্টে মামলার রায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে হওয়ায় তিন মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে বৈঠকে বসে। বৈঠকে কেবিনেট, স্বরাষ্ট্র ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, ওই জমি জেলা প্রশাসনেরই। এরপর কাগজ সেটেলমেন্ট অফিস সংগ্রহ করে চূড়ান্ত কার্যক্রম শুরু করে। যশোর সদর সেটেলমেন্ট অফিস সব ধরনের কাগজপত্র পাওয়ার পর নোটিশ টাঙিয়েছে। রাজস্ব কর্মকর্তা সামছুদ্দিন মজুমদার স্বাক্ষরিত ‘চূড়ান্ত স্বত্ত্বলিপি প্রকাশনের ইস্তাহার’ শিরোনামে ৮ সেপ্টেম্বর টাঙানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে,‘যেহেতু উল্লেখিত মৌজার স্বত্ত্বলিপিতে ১৯৫৫ ইং সনের জমিদারি দখল ও প্রজাস্বত্ব নিয়মাবলীর ৩০ নং বিধি মোতাবেক সকল আপত্তি ও ৩১ নং বিধিমতে,সকল আপিল শুনানি সমাপ্ত হইয়া আদেশসমূহ তামিল হইয়াছে। উক্ত নিয়মাবলীর ৩২ নং বিধি মোতাবেক বর্তমান খাজনা দেখাইয়া চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা হইয়াছে। অতএব এতদ্বারা আপনাদিগকে অবগত করানো যাইতেছে যে উল্লেখিত মৌজার চূড়ান্ত স্বত্ত্বলিপি সাধারণের পরিদর্শনের জন্য উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে ০৮.০৯.২০২৪ থেকে ০৭.১০.২০২৪ তারিখ পর্যন্ত খোলা থাকিবে।’ প্রদর্শনের এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর মূল্যবান ওই সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের নামে অর্থাৎ এক নম্বর খাস খতিয়ানে রেকর্ডের গেজেট প্রস্তুতের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে মাস খানিক মতো সময় লাগতে পারে বলে জেলা প্রশাসনের এসএ শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এরপর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশিত হবে। তারপর জেলা প্রশাসন তাদের এক একর ২০ শতক জমি বুঝে নেবে বলে ওই সূত্র জানায়।
এক সময় উক্ত স্থানের ব্যবসায়ী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক জানিয়েছেন,ওই জমি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ৪০ টি পরিবার সেখানে বসবাস করতো। এছাড়া, তারসহ কয়েকজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল সেখানে। আদালত থেকে তাদের পক্ষে ছিল স্টে অর্ডারও। অথচ আদালতের নির্দেশনার প্রতি থোড়াইকেয়ার করে পুলিশ সেসময় সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। কেবল তাই না, তাদের নামে বোমা হামলার মামলাও দেয়া হয়।
সূত্র জানিয়েছে, তখন এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের ছেলের নামে ফেনসিডিলের মামলা দেয়া হয়। খুলনার ফুলতলা থেকে তাকে ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করে পুলিশ।
যাদেরকে উচ্ছেদ করা হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন, বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, অ্যাড. গোপীনাথ, ফজলুর রহমান, শিবলু, শ্যামল মল্লিক ও সবুজ মল্লিক। গেজেট প্রকাশের পর আলোচিত এবং মূল্যবান এই সম্পত্তির মালিক হবে জেলা প্রশাসন। তখন জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তেই সবকিছু পরিচালিত হবে।
সূত্র: গ্রামেরকাগজ