Saturday, October 12, 2024

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার ৫ টাকার টিকিট ১০টাকায় বিক্রির অভিযোগ

- Advertisement -

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে বছরের পর বছর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বহিঃবিভাগের প্রাথমিক চিকিৎসার ৫ টাকার টিকিট ১০টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সরকারি ভাবে অডিট আপত্তি দিলেও টনক নড়েনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বরং অতিরিক্ত অর্থ তিনি সরকারি কোষাগারে জমান না দিয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা রাখছেন কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের কথিত বিভিন্ন উন্নয়নখাতে ব্যয় দেখিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকারও বেশি আত্মশতের অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ৫টাকার টিকিট ১০টাকা বিক্রি করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮৫টাকা, মার্চ মাসে ২লাখ ২২হাজার ৬২০টাকা, এপ্রিল মাসে ১লাখ ৭১হাজার ১৫৫টাকা, মে মাসে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা, জুন মাসে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৬৫ টাকা,

জুলাই মাসে ২ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা, আগস্ট মাসে ২ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ২ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৫ টাকা,

অক্টোবর মাসে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৮০ টাকা, নভেম্বর মাসে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৫০ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৩০ টাকা,

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ২ লাখ ৩ হাজার ৫৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ২লাখ ১৩হাজার ৬৭৫টাকা, মার্চ মাসে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা,

এপ্রিল মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ১৫ টাকা, মে মাসে ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৮০ টাকা, জুন মাসে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬০ টাকা, জুলাই মাসে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৫৫ টাকা, আগস্ট মাসে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮১০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ২ লাখ ৩১ হাজার ১০৫ টাকা, অক্টোবর মাসে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা, নভেম্বর মাসে ২ লাখ ২৮ হাজার ২৪০ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮০৫ টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ২লাখ ৩৩হাজার ৮১৫টাকা, মার্চ মাসে ২লাখ ১৩ হাজার ৮৫টাকা, এপ্রিল মাসে ১লাখ ৯৫ হাজার ৯১৫ টাকা, মে মাসে ২লাখ ৩২হাজার টাকা, জুন মাসে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৫ টাকা, জুলাই মাসে ২লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৫ টাকা, আগস্ট মাসে ২লাখ ৮৫ হাজার ৭১৫ টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এসব টাকা হাসপাতালের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।

সূত্র জানায়, হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আখতারুজ্জামান ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্যত্র বদলী হন। তখনকার সময়  ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা ছিলো ৩লাখ ১৯হাজার ৪৯৬ টাকা। এরপর ৯ মার্চ ডাক্তার হারুন অর রশিদ নতুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি উদ্বৃত্ত অর্থের হিসাব নিকাশ বুঝে নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে প্রতি মাসে ৮জন স্বেচ্ছাসেবীকে ৩১ হাজার টাকা বেতন প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ল্যাব সহকারী রফিকুল ইসলামকে ৫হাজার টাকা, কম্পিউটার অপারেটর কামাল হোসেনকে ৪হাজার ৫০০টাকা, ল্যাব সহকারী খাদিজা খাতুনকে ৪ হাজার টাকা, ল্যাব সহকারী শিহাব হোসেনকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, ল্যাব সহকারী ওয়াইজ উদ্দিনকে ৪ হাজার ৫০০টাকা, রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে দায়িত্বরত  রোকনকে ৬ হাজার ৫০০টাকা সিদ্দিককে ৫ হাজার টাকা ও সাথীকে ৭হাজার টাকা।

এছাড়া এই টাকা দিয়ে রিএজেন্ট, স্টেশনারী মালামাল, কম্পিউটার মেরামত রিপোটিং প্যাডসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মচারী জানান,সরকারিভাবে রিএজেন্ট, স্টেশনারীসহ নানা ধরণের মালামাল কেনার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তারপরও কেনো বাড়তি দামে টিকিট বিক্রির টাকা এসব মালামাল কিনতে হবে এটা বোঁধগম্য নই। তিনি আরও জানান, প্যাথলজি বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ল্যাব সহকারী রয়েছে। অথচ স্বেচ্ছাসেবকের নামে ৪ জন ল্যাব সহকারী রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে আসার পরও তাদের টিকিট বিক্রির টাকায় বেতন দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা প্রয়োজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একজন জানান, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত ৫টাকায় টিকিট বিক্রির টাকা নয়ছয়ভাবে বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বহির্বিভাগের টিকিট ৫টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু তাদের কাছ থেকে ১০টাকা মূল্য রাখা হচ্ছে। তারা (রোগীরা) প্রশ্ন করলে টিকিট বিক্রির দায়িত্বরা উত্তর না দিয়ে আরও গালমন্দ করেন।  যেনো এর কারণ জানার অধিকার তাদের নেই।

এই বিষয়ে হাসপাতালের প্রধান করণিক রেজওয়ান আহমেদ জানান, টিকিটের উদ্বৃত্ত টাকা প্রতি মাসে ভারপ্রাপ্ত ক্যাশিয়ার মুরাদ হোসেনের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে সোনালী ব্যাংক কালেক্টরেট শাখার যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ছাড়া সরকারি হাসপাতালে ৫টাকার টিকিট ১০টাকা করার কোন নিয়ম নেই। জেলা হাসপাতাল স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছিলো। বিগত দিনে কয়েক লাখ টাকার অডিট আপত্তি এসেছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩সদস্যের অডিট টিম ১০টাকায় টিকিট বিক্রি নিয়ম বর্হিভূত বলে গেছেন। ফলে আবারও অডিট আপত্তি আসতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ আরও জানান, টিকিট বিক্রির উদ্বৃত্ত টাকা হাসপাতালের নানা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে। কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তার সঠিক হিসাব রয়েছে।

-রাতদিন সংবাদ

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত