যশোরে বিএনপির কর্মী আবু সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও তাকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুজ্জামান মিলন, তার ভাই তারিকুজ্জামান রিপনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ঘটনার ১৩ বছর পরে বৃহস্পতিবার যশোর সদর উপজেলার কাঠামারা বিশ্বাসপাড়ার নিহত আবু সিদ্দিকীর ভাই আনোয়ার হোসেন ইনু বাদী হয়ে আদালতে এ মামলা করেছেন। অন্য আসামিরা হলেন, আন্দোলপোতা গ্রামের তহিদুল, সাত্তার, বক্কার, ইমদাদুল, তেজরোল গ্রামের নব কুমার লাল ঘোষ, জগমোহনপুর গ্রামের বুলু, দলেননগরের রোকন, আন্দোলপোতার রবিউল গাজী, নিছার আলী, আলী আজগর, গহেরপুরের ময়নুদ্দীন ময়না, এনায়েতপুরের খাইরুল, বাঘারপাড়ার উপজেলার কঠুরাকান্দি গ্রামের কামরুজ্জামান, কৃষ্ণনগর গ্রামের এরশাদ। অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় কোনো মামলা আছে কিনা সে বিষয়ে জানিয়ে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলায় আবু সিদ্দিকীর ভাই ইনু উল্লেখ করেন, আসামিরা আওয়ামী লীগ সরকার আমলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে তার ভাই আবু সিদ্দিকী বিএনপি কর্মী ছিলেন। এছাড়া, তিনি গরুর খামার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আসামিদের অপরাধমুলক কর্মকান্ডে বাধা দেয়ায় তাদের সাথে শক্রতা শুরু হয় আবু সিদ্দিকির। এরজেরে আসামিরা আবু সিদ্দিকিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ২০১১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আসামিরা অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিত হয়ে বলেশ্বরপুরের আবু সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা চালায়। তাদের হাতে থাকা দা, রামদা, হাসুয়া, গাছিদা, রড নিয়ে প্রথমে বাড়ির সামনে যেয়ে গালিগালাজ করে ডাকাডাকি করতে থাকে। তার ভাই আসামিদের দেখে বাড়ির পেছনের একটি বাগানে পালিয়ে থাকে। অন্যদিকে আলীমুজ্জামান মিলনের হুকুমে অন্য আসামিরা বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। চাল ডাল তেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন আসবাবপত্র, সোনার গহনা, গরুসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে। একপর্যায়ে আবু সিদ্দিকীর বাড়িতে ও খামারে আগুন জালিয়ে দেয়। এতে করে আবু সিদ্দিকের ২০ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর বাড়ির পেছনের বাগানে আবু সিদ্দিকিকে খুজতে যায় আসামিরা। এক পর্যায় আবু সিদ্দিকিকে দেখে ফেলায় তাড়া করে। অন্যদিকে সিদ্দিক দৌড় দিয়ে চিত্রা নদী পার হয়ে পালানোর চেষ্টা কালে একপর্যায় তাকে ধরে ফেলে আসামিরা। এরপর তাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বেধরক মারপিট করে। একপর্যায় মৃত ভেবে গহেরপুর গ্রামে ফেলে চলে যায়। পরে খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে সিদ্দিককে উদ্ধার করা হয়। পরে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় সিদ্দিক আসামিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেন ও তাকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়েছে বলে উল্লেখ করেন। একপর্যায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথেই সিদ্দিক মারা যান। এরপর সিদ্দিকের লাশ নিজ গ্রামে আনার সাহস পাননা বাদী। বাধ্য হয়ে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের এক আত্বীয় বাড়িতে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেন। পরের দিন সকালে সেখানেও হাজির হন আসামিরা। সেখানে যেয়ে সিদ্দিকের লাশ নিয়ে তড়িঘরি করে নিজ গ্রামে এনে জোর করে দাফন করান। এসময় আসামিদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকার পতন হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বাদী ১৩ বছর পর ভাইয়ের হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে এ মামলা করেন।
রাতদিন সংবাদ