আজম খান, বাঘারপাড়া (যশোর) : বসুন্দিয়ার ভৈরব নদের উপরের সেতুটি ভাঙ্গার পর থেকে চাড়াভিটা-ঘুনির রাস্তা সড়কের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। ফলে খুলনাগামী সহ অন্যান্য সব যানবাহন এ রাস্তার উপর দিয়েই চলছে। ফলে ভয়াবহ যানযটের কারণে সড়কে জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুন।
সরু রাস্তায় পণ্য বোঝাইট্রাক, পিকআপ, ভ্যান, ইজিবাইক ও যাত্রীবাহী বাস চলাচলের কারনে পথচারীদের দাড়ানোরও জায়গা থাকে না।
সুত্র মতে, বাঘারপাড়ার বাগডাঙ্গা, ওয়াদিপুর, মাহমুদপুর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়নের ঘুনিসহ আশপাশের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শত শত যানবাহনচালকেরা ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা পড়েছেন চরম ভোগন্তিতে।
ঘুনির ব্রীজ হতে যশোর খুলনা সড়ক পর্যন্ত ১৬’শ মিটার সড়ক পার হতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। ছোট-বড় দূর্ঘটনা ও যানবাহনচালকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
যশোর-নড়াইল সড়কের চাড়াভিটা বাজার থেকে যশোর-খুলনা সড়কের ঘুনির রাস্তার দুরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। সড়কটির সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার (ঘোষনগর বাজার পর্যন্ত) বাঘারপাড়া প্রকৌশল অধিদপ্তর দেখাশোনা করে। বাকী দেড় কিলোমিটার ঘুনির বাজার থেকে ঘুনির রাস্তা অংশের দেখভাল করে যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সড়কটির সদর উপজেলার এ দেড় কিলোমিটার অংশই ভোগান্তির কারণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৬’শ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্তের এ সড়কে একটি মাল বোঝাই ট্রাক ও একটি পিক-আপ দুই দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে। দুটি যানবাহনের পিছনে বেশ কয়েকটি ব্যাটারীচালিত ভ্যান, ইজিবাইক ও মাছ বোঝাই নছিমন দাড়িয়ে আছে। পথচারীরা রাস্তায় জায়গা না পেয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকছে। রাস্তাটির দুই পাশে আড়াই ফুট গভীর খাদের সৃষ্টি হয়ে সেখানে পানি জমে আছে। এর নিচে কৃষি জমি। ফলে দুটি ট্রাক বা বাস মুখোমুখি হলে দাড়ানোর জায়গা পাচ্ছেন না পথচারীসহ ছোট যানবাহন।
সিঙ্গিয়া ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী রুপা ও নয়ন জানান, রাস্তায় যদি জ্যাম না থাকে তবে সকাল ৯টার ক্লাস করতে পারি। জ্যামে পড়লে কমপক্ষে দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।
মাহমুদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইতফারা খান সুহানী জানান , জ্যামে বাধলে গাড়ির উপর বসে থাকতে হয় অনেক সময় ধরে। সঠিক সময় বিদ্যালয়ে পৌছাতে পারিনা।
এ রাস্তার নিয়মিত ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক ইসমাইল সরদার, তুহিন হোসাইন, সাইদুর ও মিজানুর রহমান জানালেন, এ রাস্তায় আগে ৫ থেকে ৭’শ টাকা আয় হতো। এখন জ্যামের কারনে ট্রিপের সংখ্যা কমে গেছে। যদি রাস্তার পাশের খাদে বোঝাই ট্রাক একবার পড়ে যায় তবে সেদিন শেষ। এ রস্তায় প্রতিদিন সাত থেকে আটবার জ্যাম সৃষ্টি হয়। চারজন যাত্রী নিয়ে রাস্তার পাশে দাড়ানোর জায়গা নেই।
নড়াইল-খুলনা সড়কে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামের পরিবহনের চালক বাদল সরদার জানান, নড়াইলের কালনা থেকে ছেড়ে ঘুনির ব্রীজ পার হয়েই ঝুকিতে থাকি। বিপরিত দিক থেকে কোনো গাড়ি আসার আগেই এ সড়কের অংশ পার হওয়ার চেষ্টা করি। জ্যামে আটকা পড়লে পরবর্তী ট্রিপ ধরতে পারি না। এ সড়কের পাশেই চা বিক্রি করেন আকবর আলী। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা, কালীগঞ্জ, খুলনা ও মাগুরার পণ্য বোঝাই ট্রাক এ সড়কে চলাচল করে। এছাড়া যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া থেকে সার ও কয়লা বোঝাই ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলায় এ সড়ক দিয়েই চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়া ও বসুন্দিয়া ব্রীজ ভাঙ্গার কারনে ১০ ফুটের এ সড়কে প্রচন্ড চাপ। সন্ধ্যার পর চাপ আরও বাড়ে।
সিঙ্গিয়া আদর্শ কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ভৈরব নদের উপর বসুন্দিয়া সেতু ঝুকিপূর্ণ হওয়ার পর থেকে চাপ বেড়েছে এ রাস্তায়। শত শত পণ্য বোঝাই ট্রাক এ রাস্তা দিয়ে ঢাকা, নড়াইল ও মাগুরায় যায়। নওয়াপাড়া থেকে থেকে সার বা কয়লা বোঝাই ১০চাকার ট্রাক এ রাস্তায় চলাচল করে। এ ছাড়া নড়াইল এক্সপ্রেস কালনা থেকে খুলনায় যায়। দুটো ট্রাক বা বাস একে অপরকে সাইড দিতে গেলে কার্পেটিং অংশের নিচে নামতে হয়। এতে সড়কের দুই পাশে আড়াই ফুটের খাদ সৃষ্টি হয়ে সেখানে পানি জমে থাকে। যার ফলে হেঁটে চলা মানুষের দাড়ানোর জায়গাও থাকে না। তিনি আরও জানালেন, রাস্তায় দুই পাশে যদি দুই ফুট করে বাড়ানো যায় তবে সকলের চলাচলের জন্য ভালোহয়। অথবা বালু খোয়ার মিশ্রণ দিয়েও দুই পাশ চলাচলের যোগ্য করা যায়।
যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুল হক জানান ,‘ঘুনিরঘাটের রাস্তাটি গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২০২২সালে সর্বশেষ মেরামত করা হয়। বসুন্দিয়ার ভৈরব নদের উপর সেতুটি ভাঙ্গার পর থেকে এ সড়কের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, সেটি অনুমোদন হলে( দ্রুতই সড়কের দুই পাশ বাড়ানো হবে।