Saturday, October 5, 2024

পাঁচ বছরে শতকোটি টাকার মালিক মোস্তফা ফরিদ

- Advertisement -

কিশোর বয়সে পিতার মৃত্যু হয়। পর সংসারে হাল ধরেন মা। গরুর দুধ ও গোবরের ঘুঁটে বিক্রি করে চলতো সংসার। অভাবে কারণে বেশি দূর পর্যন্ত পড়তে পারেন নি তিনি। তবে ইন্টারমিডিয়েট (দ্বাদশ শ্রেণী) পড়াকালীন জড়িয়ে যান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে। নৌকি টিকিট পেয়েই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এরপর টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সালিশ বৈঠক, ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য, থানায় তদবিরসহ নানা অপরাধ-দুর্নীতি মাধ্যমে মাত্র পাঁচ বছরে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সময়ের গরীব পরিবারে এ ছেলের নামে যশোর শহরে খালদার রোডে ৫তলা বিশিষ্ট ও তিনতালা বিশিষ্ট দুটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এবং তার চলাচলের জন্য পাজুরা গাড়িও আছে। শুধু তাই নয়, ঢাকায় ৫কাঠা দুটি প্লট এবং দশতালা বিশিষ্ঠ একটি বাড়িও রয়েছে তার। এছাড়াও বেনামে যশোরসহ আশপাশ জেলাগুলোতেও রয়েছে প্রায় ২০০ বিঘা জমি ও মাছের ঘের। তবে যে চেয়ারম্যানের শক্তি এবং দলীয় পদবির জোরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুধু সম্পত্তি তৈরি করেননি। বরং ক্ষমতার দাপটে গরীব দুঃখি মানুষ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের উপরে জুলুম-অত্যাচারের বাস্তবতা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। অভিযোগ রয়েছে, মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হওয়ায় ক্ষমতার বলে সালমা আক্তার নামে এক শিক্ষককে বাদ রেখে স্ত্রী সৈয়দা শিরিন সুলতানাকে আর্দশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এনে জোর করে যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক করেন। এরপরে নিজেও এ বিদ্যালয়ের সভাপতি হন। স্বামী-স্ত্রী মিলে বিধিবহির্ভূত ভাবে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর কাছের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেন, সদর উপজেলার রাজার হাটে তার কাছের এক ঘনিষ্ঠজনকে দিয়ে বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে কম দামে জমি ও ঘের কিনতো। যারা দিতে চাইতো না; তাদের জমি-ঘের দখল করে নিতেন। এবং ওই পরিবারকে হামলা, মাললা ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জমি লিখে নিতেন। প্রশাসনকে অভিযোগ জানাতে গেলে গুম করে দেয়ার হুমকিও দিত। বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ২০০ বিঘে জমি তৈরি করেছেন তিনি। তারা আরও বলেন, তার আমলে উপজেলার সকল মাদ্রাসা তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করতেন। আয়া থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া পর্যন্ত মোটা অংকের টাকা নিতেন। পদ অনুযায়ী দশ লাখ থেকে শুরু করে ১৮লাখ টাকা করে নিয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্য থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা অবৈধ্য ভাবে নিয়েছেন তিনি। এদিকে জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী উপজেলার চেয়ারম্যান থাকাকালীন রাজারহাটে একটি পেট্রোল পাম্প দখল করেন। এবং তেল পাম্প দখলের জন্য সে ৪০ লাখ টাকা নেন। এছাড়াও তিনি যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডারবাজি করতেন। শহরের মোড়ে মোড়ে অবৈধ দোকানপাট, বেটারীচালিত রিকশা-ইজিবাইক এবং রাতে ট্রাক বা কভ্যাড ভ্যান শহরে ডুকলে চাঁদা দিতে হতো। এছাড়াও সালিশ বৈঠক ও ঠিকাদারি কাজে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এলাকায় প্রভাব বছর খানিক আগে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নূরুল আমিনকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। নির্যাতনের বিষয়ে ওই সময় প্রধান শিক্ষক নূরুল আমিন গণমাধ্যমকে জানান, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষের দিকে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হতে চান। বিদ্যালয়ে সম্প্রতি তিনজনের নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি (ফরিদ) ওই নিয়োগ আটকে রাখার জন্য কয়েকবার বলেছেন। কমিটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করে ফেলে। পরে তিনি (ফরিদ) নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন আটকে রাখার জন্যও চাপ দিতে থাকেন। এর মধ্যে বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ ডাকা হয়। সমাবেশে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান অতিথি করা হয়। কিন্তু সমাবেশের আগের দিন ফোন করে তাঁকে (নূরুল) তাঁর বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তাঁর ক্যাডারদের দিয়ে সকাল ১০টা ১১ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। তখন নূরুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, নির্যাতনের সময় তাঁর ঘাড়ে, মাথায় চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারা হয়। অভিভাবক সমাবেশে তাঁকে (ফরিদ) প্রধান অতিথি করতে বলা হয়। তাতে রাজি না হওয়ায় এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে। রাজনৈতিক উত্থান ১৯৮৫ সালের দিকে যশোর সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি যশোর জেলা ছাত্ররীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর ২০০৩সালে জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। বর্তমানে এ কমিটি চলমান রয়েছে। এদিকে ২০২১ সালে সদর উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে নৌকার টিকিট নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত