একদম অজ পাড়া গায়ে থেকে একটি রাজনৈতিক দল পরিচালনা করছেন মাস্টার মো: শামছুল হক। দেশের মানুষের জন্য কিছু করার মনোবাসনা নিয়ে তিনি এই দল গঠন করেছেন। নাম গণ ঐক্যফ্রন্ট (গাফ) বাংলাদেশ। দলটির তিনি আহবায়ক। দেশের সব জায়গায় দলটির প্রচার না থাকলেও তিনি চেষ্টা করছেন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। বিভিন্ন স্থানে কমিটি রয়েছে। যেখানে কমিটি নেই সেখানে কমিটি গঠন করার চেষ্টা করছেন। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামে তার বসবাস। শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে গিয়ে তিনি দলের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
১৯৮৬ সালে প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের আত্মপ্রকাশ করেন এই প্রবীণ শিক্ষক। ২০০৭ সালে দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন দেয়া হয়। কিন্তু শর্ত পূরণ করতে না পারায় নিবন্ধন হয়নি। তবে তিনি এখন দলের কার্যক্রম জোরদারভাবে চালানোর জন্য মাঠে নেমেছেন বলে দৈনিক স্পন্দনকে জানিয়েছেন মাস্টার শামছুল হক।
তিনি এর আগে এ দলের হয়ে গত ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন। ভোটও পেয়েছিলেন বেশ। সামনে আবারো জাতীয় নির্বাচন হলে তিনি সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে চান বলে জানিয়েছেন। এজন্য ৭দফা দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন মাস্টার শামছুল হক।
প্রবীণ এই শিক্ষক বলেন, জাতির রাজনৈতিক অঙ্গনে আধিপত্যবাদী নেতৃত্বের দখলদাররা দেশের অবহেলিত জনগণ কোনোভাবে মাথা চড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের দাবায়ে রাখার জন্য জনপদে ধাপে ধাপে গণতান্ত্রিক দলের নামে পদায়ন করে বিভিন্ন নামে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন স্তরে স্তরে তৈরি করেছে। এদের কাজ হলো অজ্ঞ অসচেতন জনগণকে বিভ্রান্তি করে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে দলের দাসত্ব করানো। এ সমস্ত সংগঠনের কাঁধে বন্দুক রেখে নেতারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে জনগণের ন্যায্য অধিকার হরণ করেছেন। আর সহযোগী সংগঠনগুলো দলীয় শক্তি বলে অপশক্তিতে পরিণত হয়ে ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কোন্দল করছে এবং খুন খারাবী করে সমাজকে অস্থিতিশীল করেছে। এ সমস্ত ভাড়াটেরা জনগণকে অবরুদ্ধ করে রাখছে। এখানে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে আর দরিদ্র শ্রেণী দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। আর যাদের শ্রম ও ঘামে জাতির অর্থনীতির চাকা ঘুরে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে না । তাই দেশে এখন রাজনীতির নামে চলছে দল দল খেলা। জাতির চলমান রাজনীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধে দৃশ্যমান কোনো বাস্তব ভিত্তিক পরিকল্পনা নেই।
এই জন্য তিনি ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দাবি গুলো হলো-
রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন : সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠন সংকোচন। সংসদ সদস্যদের দলীয় দায়িত্ব থেকে অপসরণ এবং তাদের সংসদীয় দায়িত্ব পালন ব্যতীত নির্বাহীর উপর কর্তৃত্ব নিষিদ্ধকরণ।
সংসদীয় পদ্ধতির সংস্করণ :- জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষ বিশিষ্টকরণ। মহিলা আসন সংরক্ষণ এবং সংখ্যালঘু ও আলেমদের জন্য দশ শতাংশ আসন সংরক্ষণ।
দেশের ঘুষ দুর্নীতি মুক্তকরণ :- দুর্নীতিবাজদের দমনে কমিশনের পরিধী ও দায়িত্ব বৃদ্ধিকরণ। সরকারি আমলাদের দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ঘুষ, দুর্নীতি, মুক্তকরণে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের হিসাব সংরক্ষণ এবং শাস্তির ব্যবস্থাকরণ। সরকার প্রধানের একটা বিশেষ পর্যবেক্ষণ সংস্থা গঠন।
দারিদ্রদের জন্য বার্ষিক ভাতার ব্যবস্থাকরণ :- জাতীয় অর্থ বিদেশে পাচার রোধকরণ। দেশের ধনীরা জাতির অর্থ সম্পদের অভিভাবক হিসেবে তাদের নিকট থেকে দরিদ্রতা হ্রাস কর আদায় এবং অধিক মূল্যের জমির বিক্রয় কর আরোপ করে দরিদ্রদের ভাতার ব্যবস্থাকরণ।
সুবিধা বঞ্চিতদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ :- বৃদ্ধ পিতা মাতার সেবাদানে সন্তানদের বাধ্যকরণ। জাতির সেবাদানকারী অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ভাতার ব্যবস্থা করণ। বেসরকারি সেবামূলক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জনগণের প্রতি হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বেকার সমস্যা সামাধানে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান কারার উদ্যোগ গ্রহণ।
আধিপত্যবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বিচার ব্যবস্থা সম্প্রসারণ :- সমাজে অপরাধদমনে ইউনিয়ন পর্যায়ে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থাকরণ। সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গীবাদীদের অভিভাবকদের বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করণ। ধর্ম পালন ও প্রচারে সরকারি নির্দেশনা প্রদান।
জাতির সার্বিক উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ :- বৈশ্বিক রাজনীতির সাথে সংগতি রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি গ্রহণ ও সমাজে আর্থ সামাজিক বৈষম্য হ্রাসকরণ। বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা বৃদ্ধি করণ। কৃষি কারিগর ও তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং অপসংস্কৃতির রাজনীতি ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিষিদ্ধকরণ। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত করণ। ধর্মকে রাজনীতির উৎস না করণ। মানববাদকে আমাদের রাজনীতির ভিত্তি হিসাব গ্রহণ।
-রাতদিন সংবাদ