Monday, November 11, 2024

যশোর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করার দাবি

- Advertisement -

যশোরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর না করায় দুর্ভোগে রয়েছে ২১ জেলার মানুষ। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে পদ্মার এপারের এসব জেলা। হচ্ছে উন্নয়ন বঞ্চিত। দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এসব কারণে যশোরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর করার দাবি জোরালো হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে এখনই যশোরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ ভুক্তভোগীরা। ১৯৪২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার যশোরে বিমানবন্দর তৈরি করে। সেই থেকে ৭৮ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এই বিমানবন্দরের কপালে আন্তর্জাতিক মর্যাদা জোটেনি। ফলে, নানা দিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পদ্মার এপারের ২১ জেলার কোটি কোটি মানুষ। বাংলাদেশে মোট তিনটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দর ও সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যার সবগুলোই পদ্মার ওপারে। পদ্মার এপারের একমাত্র বিমানবন্দরটি যশোরে। এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২১ জেলার মানুষ। এরমধ্যে বৃহত্তর খুলনা, বৃহত্তর যশোর, বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও বৃহত্তর ফরিদপুরের মানুষের দ্রুত যাতায়াতের উপায় যশোর বিমানবন্দর। তাও ঢাকা পর্যন্ত। জরুরিভাবে বিদেশে যাওয়ার উপায় এসব এলাকার মানুষের নেই। যশোর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করার পিছনে যেসব যুক্তি জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা দেখাচ্ছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যশোর সবজি, ফুল, যন্ত্রাংশ, মাছের পোনা, খাদ্যশস্য উৎপাদনে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হলে এখানে উৎপাদিত পণ্যসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যাবে।পদ্মার এপারের ২১ জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আসা যাওয়া সহজ হবে। তারা আগ্রহী হবে বিনিয়োগে। একইসাথে পণ্য আনা নেওয়া সুবিধা হবে ব্যবসায়ীদের জন্যে। চাপ কমবে ঢাকার উপর থেকে। যশোর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত। ঢাকা-কলকাতার সংযোগকারী শহর এই যশোর। প্রতি বছর ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা ও ভ্রমণ করতে ভারতসহ অন্যান্য দেশে যায়। আর এটি করতে তাদের অনেকের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হয়। এতে অর্থ, সময় ও শ্রম নষ্ট হয়। যশোরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করলে এই দুর্ভোগ থাকবে না। যশোরের নওয়াপাড়া শিল্পনগরী। এখানে রয়েছে নৌবন্দর। বেনাপোল দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর। এখানে দেশি-বিদেশি লোকজন আসে। এ কারণে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়া জরুরি।এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর হজ করতে সৌদি আরবে যান। ঢাকায় গিয়ে বিমানে ওঠা তাদের জন্যে যেমন দুর্ভোগের, ঠিক তেমনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা। সৌদি থেকে ঢাকায় নেমে বাড়িতে আসাও হাজিদের জন্যে কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃদ্ধদের জন্যেতো দুর্ভোগের শেষ থাকে না। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রাণকেন্দ্র হবে যশোর। এ কারণে এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা এখন সময়ের দাবি।যশোরে বিমান বাহিনী ঘাঁটি রয়েছে। ফলে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনায় তারা ভূমিকা রাখতে পারবে। অতিরিক্ত অর্থ খরচ হবে না। এসব দিক বিবেচনায় অবিলম্বে যশোরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, যশোরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে এখানে কার্গো বিমান আসবে। ফলে, কৃষক তার উৎপাদিত সবজিসহ অন্যান্য পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারবেন। তখন তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর না থাকায় কৃষক সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্ত¡ভোগীরা। এখান থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ ভারত ও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে যান। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট না থাকায় দুর্ভোগে পড়েন তারা। এমপি শাহীন চাকলাদার বলেন, বিমান সচিবের সাথে কথা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি না হলে আগামী জানুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশ বিমান যশোর থেকে দমদম এবং যশোর থেকে চেন্নাই দু’টি ফ্লাইট চালু করবে। যশোরকে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার দাবি জানান এই এমপি।বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, যশোরের বিমানবন্দর প্রাচীনতম। খুলনা বিভাগসহ এই অঞ্চলের মানুষের আকাশ পথে চলার একমাত্র উপায় এটি। এখন শুধু দাবি না, যশোরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, যশোরসহ পদ্মার এপারের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার বিকল্প নেই। এখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এটি করা জরুরি। যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, যশোরে ব্রিটিশ আমলের বিমানবন্দর। অনেক আগেই এটিকে আন্তর্জাতিক মানের করার দরকার ছিল। আর সময় ক্ষেপন না করে এখনই আন্তর্জাতিক মানের করা উচিত। যশোর চেম্বার অব কর্মাসের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, যশোরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার দাবি দীর্ঘদিনের। এটি আন্তর্জাতিক মানের করলে সারা পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বাড়বে। তখন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা আসবেন। সহজে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আনা নেওয়া করা যাবে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়বে। যা এখন হচ্ছে না। অবিলম্বের যশোরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর করার দাবি এই ব্যবসায়ীর। বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, যশোর ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রভূমি। এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত রয়েছে। এ কারণে উন্নয়নে পিছিয়ে যাচ্ছে যশোর। এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করলে ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপক প্রসার ঘটবে। সরকার এই অঞ্চলে যে অর্থনৈতিক জোন করার চিন্তা করছে তার আগে যশোরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করতে হবে। তা না হলে অর্থনৈতিক জোন তেমন কোনো কাজে আসবে না।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত