যশোর বিআরটিএ অফিসে সেবাগ্রহীতার উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। করোনা উপেক্ষা করে সকাল নয়টা থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা থাকছে এখানে। এ কারণে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি। পর্যাপ্ত জনবল ও জায়গার সংকটে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিআরটিএতে জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। যশোরের এই অফিস ১৯৯০ সালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী চলছে এখনো। অথচ গত ৩০ বছরে বেড়েছে যানবাহন। এ কারণে বেড়েছে সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও। এ কারণে অফিসের বিভিন্ন কার্যক্রমও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অফিসে যশোর ও নড়াইলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন মাত্র ১২ জন। এদের মধ্যে একজন থাকেন নড়াইল অফিসে। এ কারণে ১১ জন নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে যশোর বিআরটিএ’র কার্যক্রম। কেবল জনবল সংকট না, এখানে রয়েছে জায়গার ব্যাপক সংকট। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে অফিসের কার্যক্রম সীমিত ছিল। হাতেগোনা দু’ একটি বিষয়ে কাজ চলে। বর্তমানে নতুন করে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ায় বিআরটিএ অফিসে প্রতিদিন শ’ শ’ মানুষ ভিড় করছেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করার জন্যে। বুধবার সকাল ১০ টা। বকচর বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা যায় সামনে শ’শ’ মোটরসাইকেল পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় জায়গা না থাকায় কেউ কেউ মোটরসাইকেল রাখেন মহাসড়কের ওপর। দ্বিতীয়তলায় অফিসে গিয়ে দেখা যায় মানুষ আর মানুষ। মূল ফটকে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও সেদিকে কারো নজর নেই। তবে, প্রবেশের মুখে সবার শরীরের তাপমাত্রা চেক করা হয়। অফিসের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি কাউন্টার। প্রতি কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। এর বাইরে আরও দুইটি কাউন্টার বায়োমেট্রিকের জন্যে রয়েছে। সেগুলোরও অবস্থা একই। গায়ে গায়ে মিশে লাইনে ছিল সবাই। এদের মধ্যে কারো কারো মুখে মাস্কও ছিল না। মণিরামপুর থেকে আসা শহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বুলবুল ও টগর হোসেন, শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের আশরাফুল আলম, রেলগেটের জনি, শংকরপুরের আসমাউল, মণিহার এলাকার করিম হোসেনসহ একাধিক সেবাগ্রহীতার সাথে কথা বললে তাদের অধিকাংশই বলেন, করোনার কারণে তারা প্রয়োজনীয় কাজ করতে তারা পারেননি। পাশাপাশি নতুন করে পাস হয়েছে সড়ক আইন। এ কারণে জরিমানার ভয়ে এখন তারা কাগজপত্র ঠিক করতে এসেছেন। তারা অভিযোগ করেন, এখানে সেবা যতটুকু পাচ্ছেন তার চেয়ে দুর্ভোগ বেশি। এতটা ভিড় হচ্ছে যে, পা ফেলা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। যেকোনো কাজের জন্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কাউন্টারে বেশির ভাগ সময় কর্মকর্তারা থাকেন না বলে অনেক সেবাগ্রহীতার অভিযোগ।কেউ কেউ এসে ১০ মিনিট চেয়ারে বসে ফের উধাও হয়ে যান। ডেকেও তাদেরকে পাওয়া যায় না। এসবের বাইরে রয়েছে দালাল চক্রও। দালাল ধরলে দ্বিগুণ টাকায় সহজে কাজ হয় বলে জানান কেউ কেউ। আগতদের মধ্যে কেউ কেউ জানান, বর্তমানে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্যে ক্রেতারা শোরুমের উপর কাগজপত্র করার দায়িত্ব দেওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকেই। এছাড়া, লার্নার নিয়ে অনলাইনে আবেদন নিয়ে জটিলতার কথা বলেন কেউ কেউ। বর্তমানে সার্ভারের সমস্যায় আবেদন করা যাচ্ছেনা বলে জানানো হয়। এদিকে, সকাল সাড়ে ১১টায় বিআরটিএ’র সামনে গিয়ে দেখা যায়, রুবেল নামে এক ব্যক্তি রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহীদের কাছ থেকে কাগজপত্র জমা নিচ্ছেন। প্রতিটি ফাইলের সাথে প্রকাশ্যেই এক থেকে দুইশ’ টাকা করে নেন তিনি। এ সময় একজন টাকা না দেওয়ায় তিনি দায়িত্ব ফেলে তার পিছু ছোটেন। এরমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। এ কারণে কাগজপত্রগুলো ভিজতে থাকে। এ সময় তার পরিচয় জানতে চাইলে বলেন মোটরসাইকেল শোরুমের লোক। এই বলে চলে যান। বিআরটিএ সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে অফিস বন্ধ ছিল। পরে সীমিত আকারে অফিস চালু হয়। গত ২৩ আগস্ট স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে গ্রাহকের চাপ বেড়ে যায় চার গুণ। প্রতিদিন বিভিন্ন কাজের জন্যে গড়ে পাঁচশ’ আবেদন জমা পড়ছে। জনবল সংকটের কারণে এরমধ্যে তিনশ’ ফাইল ছাড় করা হয়। বিশেষ করে নতুন লাইসেন্স তৈরি ও নবায়ন এবং বায়োমেট্রিক। এ বিষয়ে যশোর সার্কেলের সহকারী পরিচালক কাজী মোরছালীন বলেন, তাদের যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন তা নেই। ফলে, একজনের উপর বেশি চাপ পড়ে যায়। এছাড়া, দীর্ঘদিন স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন চাপ আগের চেয়ে বেড়েছে। মাসখানিকের মধ্যে এ চাপ কমে যাবে বলে জানান তিনি। বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন সবকিছুই অনলাইনে হচ্ছে। এছাড়া টাকাও যে যার মতো ব্যাংকে জমা দিচ্ছেন। রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে শোরুমের মাধ্যমে। ফলে, আর্থিক লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই।এছাড়া তিনি আরও বলেন, মুড়লি মোড়ে সরকারি চার একর জমির ওপর বিআরটিএ অফিস করতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। যা জেলা প্রশাসক সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সাড়ে তিন বছর ধরে তার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। প্রস্তাবনাটি গৃহীত হলে সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
সুমাইয়া রহমান