চলমান করোনা সংকটের মধ্যে যশোরে গাঁজা সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গাঁজার বিক্রি যেমন বেড়েছে, তেমনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে বেশিবেশি উদ্ধারও হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে গোপনে এর চাষও হচ্ছে। গত দু’মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইউনিট মাদকদ্রব্য উদ্ধারে সাফল্য দেখালেও সাধারণ মানুষ অভিযান আরও বৃদ্ধির দাবি করেছেন। কয়েকটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, করোনা সংকটের মধ্যেও সংঘবদ্ধ গাঁজা সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসময়ে কমপক্ষে চারটি স্পট থেকে গাঁজা গাছ উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সাইজের লম্বা তিনটি গাঁজার গাছসহ রাকিব হাসান নামে এক গাঁজা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে যশোর সদর উপজেলার রামনগর পুকুরকুল পাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে গাঁজার গাছসহ রাকিব হাসান নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। সে সদর উপজেলার রামনগর পুকুরকুলপাড়ার মোরশেদ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় কোতয়ালি মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাকিব হাসানকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। কোতয়ালি মডেল থানা সূত্রে জানাগেছে,থানার একজন এএসআই বৃহস্পতিবার ১০ সেপ্টেম্বও সকাল ৭ টায় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রামনগর পুকুরকুল গ্রামের জনৈক অন্তর বাড়ির পিছনের দিকে দক্ষিণ পাশের্ পরিত্যক্ত জমির মালিক জনৈক নাজমুল হুদার জমিতে গাঁজার গাছ পরিচর্যা করার সময় রাকিব হাসানকে হাতে গ্রেফতার করে। এ সময় ১০ ফুট লম্বা দু’টি ও ৪ ফুট লম্বা একটি গাঁজার গাছ উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, ২৭ আগস্ট রাত সোয়া ১০টায় বেনাপোলের নামাজ গ্রামে অভিযান চালিয়ে মাসুদ রানা নামে এক যুবককে আড়াই কেজি গাঁজাসহ আটক করে র্যাব সদস্যরা। মাসুদ রানা বৃত্তিআঁচড়া গ্রামের আইজ উদ্দীনের ছেলে। একই দিন রাতে কোতোয়ালি পুলিশ ঘোড়াগাছা গ্রামের ঈদগাহে বিক্রির সময় দু’শ’ গ্রাম গাঁজাসহ শফিকুল ইসলামকে আটক করে। ২ আগস্ট রাতে যশোরের হাশিমপুর পশ্চিমপাড়ায় অভিযান চালিয়ে গলির কাঁচা রাস্তার ওপর থেকে ইউনুস বিশ্বাসকে একশ’ ২০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। ৮ আগস্ট রাতে যশোর কোতোয়ালি পুলিশ কচুয়ায় অভিযান চালিয়ে আবু সরোয়ার মোল্লার ছেলে আব্দুল্লাহকে আটক করে। তার বাথরুমের পাশে গাঁজা চাষ হচ্ছিল। একটি গাঁজা গাছ উদ্ধার হলে আব্দুল্লাহ কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় গাছসহ তাকে আটক করে থানায় মামলা দেয়া হয়। এছাড়া, ১৫ আগস্ট রাতে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা যশোর শহর ও শহরতলীতে অভিযান চালিয়ে ১০ ফুট লম্বা একটি গাঁজা গাছ উদ্ধার করে। শহরতলীর বিরামপুর বাবুপাড়া শীলা রায় স্কুলের পাশের হরেণ বিশ্বাসের বাড়িতে টিউবওয়েলের পাশে গাঁজার গাছটি রোপণ করা ছিল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনা ও যশোর পুলিশের পৃথক অভিযানে আধা কেজি গাঁজা উদ্ধার করে ১৫ জুলাই রাতে। এসময় গাঁজা দখলে রাখার ঘটনায় যশোর শহরের বেজপাড়া আনছার ক্যাম্প পানির ট্যাংকের পাশের মৃত আনোয়ার মোল্লার ছেলে হাফিজুর রহমান ওরফে হাফিজ, চাঁচড়া চেকপোস্ট সোহরাব হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম রুস্তম, সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা গ্রামের সেলিমের ছেলে আবুজার ও সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া বেড়বাড়ি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে বাবু আটক হয়। একই দিন পুলিশ গাঁজা বিক্রিকালে শফিকুল ইসলাম লিটন নামে যশোর সদর উপজেলার শ্রীবদ্দি ঘোড়াগাছা গ্রামের গাঁজা কারবারীকে আটক করে। ২০ জুলাই যশোরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় ক সার্কেলের সদস্যরা দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেন। এসময় তিন মাদক বিক্রেতাকে আটক করা হয়। ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় গোপন খবর পেয়ে তালবাড়িয়া ক্যাম্পের একটি টিম শেখহাটি তমালতলার নারায়ণ সাহা ওরফে নারু গোপালের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় তার ঘর থেকে দেড়শ’ গ্রাম গাঁজাসহ তাকে আটক করা হয়। ২৫ জুলাই রাতে গোপন খবরে উপশহর পার্কে অভিযান চালিয়ে গাঁজা বিকিকিনি চক্রের চারজনকে একশ’ ২০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে পুলিশ। এরা হচ্ছে, যশোর সদর উপজেলার মুড়লী খাঁ পাড়ার মৃত জান আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন, বিরামপুর কালীতলার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে তাহসিন আহমেদ ওরফে অংকন, উপশহর এ ব্লকের মুকুল হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ও সি ব্লকের জাবেদ হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান জনি। ২৬ জুলাই রাতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে একশ’ ৫০ গ্রাম গাঁজাসহ একজনকে আটক করা হয়। অপরদিকে, ওই পুলিশ টিম একই রাতে শানতলার আজিজুর রহমানের চায়ের দোকানের সামনে থেকে বকুল হোসেনকে সাড়ে তিনশ’ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে। এভাবে আরও কয়েকডজন অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। আরও অনেক গাঁজা কারবারী, সেবনকারী ও মাদক কারবারী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দ্রুত এদের আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে।সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ বলেছেন, চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও জোরালো করতে হবে। অনেক স্থানে গোপনে এসব কারবার চালানো হচ্ছে। এদেরকে সমুলে উৎপাটন করতে না পারলে মাদকের করালগ্রাস থেকে যুব সমাজসহ সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা যাবে না। এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, গাঁজা ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, যা অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে গাঁজার অনেকগুলো চালান আটক করা হয়েছে। এছাড়া এ কারবারে জড়িত অর্ধশতজনকে আটক করা হয়েছে।
রায়হান উদ্দিন