অনেক অপরাধের অপরাধী যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) নাইট গার্ড বদিউজ্জামান বাদল পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। এবার যবিপ্রবির উপাচার্যের সাবেক একান্ত সচিব ও বর্তমান কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামরুল হাসানের অফিস রুম ভাঙচুর ও জীবননাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।সোমবার দুপুরে বাদলকে আটক করে পুলিশ। বাদল সদর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শী কর্মচারী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আরশাদ আলী জানান, যে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদের আপগ্রেডেশন বিভিন্ন কারণে বিলম্ব হয়েছে তারা রোববার উপাচার্য্যের আবেদন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার উপাচার্য্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির সাথে মিটিংয়ে বসেন। সভা শেষে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ফলাফল জানতে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামরুল হাসানের কাছে যান। সেখানে কামরুল হাসানের সাথে কর্মচারিদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তারা এ ঘটনার বিচার চেয়ে রেজিষ্ট্রারের কাছে স্মারকলিপি দেন।অন্যদিকে এটিএম কামরুল হাসান যবিপ্রবির প্রক্টরের কাছে ক্যাম্পাসের বাইরে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, উপাচার্য্যরে সাথে কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির মিটিং শেষে ৫ তলায় নিজ কক্ষে চিঠি লেখার জন্য কর্মকর্তা সমিতির কয়েকজনকে নিয়ে অবস্থান করছিলাম। এ সময় (দুপুরে দুইটা) বদিউজ্জামান বাদলসহ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী আমার রুমে প্রবেশ করে বলে, ‘ফোন রাখ, আজ তোর খবর আছে, তোকে আমি মেরেই ফেলবো’। এসব বলে বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকি দিতে থাকেন এবং চেয়ার উচিয়ে মারতে আসে বাদল।এ সময় রেজিষ্ট্রার দপ্তরের সেকশন অফিসার শাহিন হোসেন, ইকবাল হোসেন, ট্রেজারার দপ্তরের আরিফুল ইসলাম শিন, কর্মচারী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আরশাদ আলী, স্টেট অফিসার হাসান আলীসহ তাদের অনুসারীরা তাকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন্ এবং হুমকি ধামকি দেন।সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সাজিয়ালি ফাঁড়ির পুলিশ সেখানে পৌঁছায় এবং বদিউজ্জামান বাদলকে ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ কারার জন্য আটকে রাখেন। সাজিয়ালি ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুপক্ষের ঝামেলায় অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির তৈরী হয়েছিল। আমরা ক্যাম্পাসে গিয়ে দুপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক একটি অভিযোগ দিলে জিজ্ঞাসাবাদের জন কর্মচারি নৈশ্য প্রহরী বদিউজ্জামান বাদলকে ফাঁড়িতে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ বা মামলা দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, বদিউজ্জামান বাদল নৈশ্যপ্রহরী হয়েও নানা অপরাধের সাথে জড়িত। চাকরি হারিয়েও উচ্চ আদালতের মাধ্যমে তা ফেরৎ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে আরেকটি অপরাধ করলো। বাদলের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গ্রাম শ্যামনগরে। ফলে স্থানীয় একটি প্রভাব সবসময় দেখিয়ে থাকে সে। ২০১০ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে কলগার্লসহ আটক হওয়া পর দিন তাকে বহিস্কার করা হয়। পরে তাকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে ২০১২ সালের ১৪ মে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনসহ তৎকালীন উপাচার্য্য প্রফেসর আব্দুস সাত্তারের কাছে স্মারকলিপি দেয়। পরের বছরের ১৩ জুন বিকেলে ছাত্রীদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচারণের অভিযোগে ছাত্ররা বিক্ষোভ করে। সে সময় বাদল তার নিজের গ্রাম থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মারপিট করে। এই নিয়ে তুমুল গণ্ডগোল শুরু হয়। মোটরসাইকেল আগুনে পোড়ে বেশ কয়েকটি। ভাঙচুর হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়। সূত্রটি জানিয়েছে, ২০১৪ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক ট্রেজারার প্রফেসর জামাল হোসেন এবং বর্তমান রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবিবকে লাঞ্ছিত করেন এই নৈশ্যপ্রহরী বাদল। ওই বছরের ১৭ জুন যশোর শহরের শংকরপুর এলাকা থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল ও একশ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ পুলিশের হাতে আটক হয়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মাদক বিক্রি করে থাকে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে সংবাদ পায় পুলিশ। ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় যোগদান করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান যশোর-৩ (সদর) আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। সেখানে তার সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বাদল। ফলে রিজেন্ট বোর্ড স্থায়ীভাবে তার চাকরি বাতিল করে। বাদল রিজেন্ট বোর্ডের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করলে আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে মাস দুইয়েক আগে তার চাকরি ফিরিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। চাকরি ফিরে পেয়েই গত সোমবার বিকেলে বাদল আরো একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্ম দিলো।।
বিশেষ প্রতিনিধি