Wednesday, September 18, 2024

বেনাপোল স্থলবন্দরের দূর্নীতিবাজ ট্রাফিক পরিদর্শক এনামুলের খুঁটির জোর কোথায়?

- Advertisement -

বেনাপোল স্থলবন্দরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন আলোচিত ট্রাফিক পরিদর্শক এনামুল হক মোল্লা। প্রায় একযুগ ধরে বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড-৩১ নিজের দখলে রেখে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজে ট্রাফিক পরিদর্শক হলেও এডি আতিকুলের ঘর দখল করে বসে আছেন। এছাড়া সরকারি বদলির আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন ইচ্ছে খুশি মত। তাকে বদলি করা হলে কয়েকদিন গাঁ ঢাকা দেন। পরে আবার একই স্থলে এসে একই অপকর্ম চালিয়ে যান। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থলবন্দরের কর্মকর্তা, কর্মচারী, আমদানী, রফতানীকারকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। অবিলম্বে তার অপসরণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর প্রধান কার্যলয় থেকে পরিচালক (প্রশাসন) প্রদোষ কান্তি দাস স্বাক্ষরিত এনামুল হক মোল্যার বদলির আদেশ আসে। যার স্মারক নং(১৮.১৫০.০১৯.২০.০০.০০২.২০১২)। আদেশে তাকে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড ৩১ থেকে বেনাপোল বন্দরের ৩৯ নং গোডাউনে বদলি করা হয়। এখানে গুদামজাতকরণ ও বিতরণ ছাড়া তেমন কোনো কাজ না থাকায় তিনি কিছুতেই সেখানে যেতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে উর্দ্বোতন কর্মকর্তাকে হুমকিও দেন তিনি। বদলি আদেশের পর তিনি ডিসেম্বরের শেষের দিকে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে বেনাপোলে ফিরে আসেন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে। অথচ এসময়ে তিনি বেনাপোল স্থলবন্দরে অবস্থান না করে ও কোনো কাজ না করেই বেতনের সাথে ওভারটাইমের টাকা হাতিয়ে নেন। বিষয়টি নিয়ে বন্দরে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সূত্র জানায়, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড-৩১ ভারত-বাংলাদেশের আমদানি রফতানি মালামালের প্রধান ট্রানজিড। এখান থেকে গাড়ি প্রতি এনামুলকে উৎকচ না দিলে বিভিন্ন পণ্য খালাশ হয় না। এছাড়া তার মনমত উৎকোচ দিলে সরকারি রাজস্বও দেয়া লাগে না । আমদানীকৃত বিভিন্ন ফল, টমেটো, কাচাঁ ঝাল, মাছ, শুটকি মাছ, পিয়াজ, রসুন, শুখনো ঝালসহ বিভিন্ন পণ্য খালাশের জন্য সরকারি রাজস্ব প্রদানের পর ট্রাফিক পরিদর্শক এনামুলকে অতিরিক্ত টাকা না দিলে দিনের পর দিন মনগড়া অজুহাতে পণ্য আটকে রাখা হয়। অবাক ব্যাপার হচ্ছে, বেনাপোল বন্দরে বর্তমানে সকল কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হয়। অন্য সকল ট্রাফিক পরিদর্শকের অনলাইনে নিজস্ব আইডি থাকলেও এনামুল নানা দূর্নীতির আশ্রয় নিতে এখন পর্যন্ত নিজের নামে আইডি না খুলেই ইচ্ছে মত কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড-৩১ থাকে বহিরাগতদের অবাধ চলাচল। প্রবেশ গেট দিয়ে তার নাম করে স্থানীয় দালাল, চোরাকারবারী, মাদককারবারী আড্ডায় মেতে ওঠে। তার ইন্ধনে বহিরাগতরা প্রতি ট্রাক থেকে বখশিস হিসেবে পণ্য নামিয়ে তা বিক্রি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে বাহিরাগতদের নিয়ে আড্ডায় মেতে ওঠার সাথে প্রতিদিন ওই সেডে চলে বাহারী খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। আবার কোনো কোনো সময় অপকর্ম করে রোজগার করা টাকা দিয়ে তিনি চোরাকারবারী ও দালালসহ বন্দর কর্মকর্তাদের গরু, ছাগল জবাই দিয়ে আপ্যায়নও করান। বিভিন্ন দিবস আসলে চলে অতিরিক্ত চাঁদাবাজি। রাতে তার অফিসে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে নিয়ে তিনি মদ্যপানে মেতে ওঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তার এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যেয়ে তার উর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা লাঞ্চিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, মারপিটের শিকারও হতে হয়েছে অনেকের। সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক বছর আগে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড-৩১ এর ডিডি মামুনকে জনমম্মুখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়। এছাড়া এডি আতিকুজ্জামানকে হুমকি দিয়ে তার অফিস কক্ষ দখল করে আড্ডা দেয়া তার রৃটিন ওয়ার্ক। নিজ ট্রান্সশিপমেন্ট কিংবা বেনাপোল বন্দর কর্মকর্তাদেরই নয়, তার বিরুদ্ধে প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথেও অশোভন আচরণের অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা অফিসের পরিচালক পর্য়ায়ের এক কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালজ দেন তিনি। প্রধান কার্যালয়ের অডিট অফিসার আমানুল্লাহকে মোবাইল ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেন এনামুল। পরে আমানুল্লাহ থানায় সাধারণ ডায়েরি ও দপ্তরে এনামুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এদিকে, এখনো তিনি সেখানে যোগদান না করে সরকারি আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যথেচ্ছাচার করে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব ঘটনা দেখার কেউ নেই। এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও আমদানী রফতানীকারকদের দাবি, তারা এনামুল হক মোল্যার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এমতাবস্তায় তারা উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সাথে অপকর্মের হোতা এনামুলকে অপসরণের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ট্রাফিক পরিদর্শক এনামুল হক মোল্যা বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সবই মিথ্যা। একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি জানান, এখানকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তারা দূর্নীতি করে এখন তার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। এছাড়া আর কিছু জানতে হলে বেনাপোলে এসে সরাসরি কথা বলার আহবান জানান তিনি।
এদিকে, তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলার কয়েক মিনিটের মাথায় বেনাপোল থেকে একাধিক সাংবাদিক মোবাইল ফোনে এনামুল হক মোল্যাকে নিয়ে সাফাই গাইতে শুরু করেন। কেউ কেউ এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্যও অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থল বন্দরের ডিডি (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, এনামুলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে যা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখন সেটা তাদের বিষয়।
এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ের অডিট অফিসার আমানুল্লাহ বলেন, তাকে মোবাইল ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেন এনামুল। বিষয়টি নিয়ে তিনি তেজগাও থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন। একইসাথে দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন। অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বদলির আদেশ দেয়া প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) প্রদোষ কান্তি দাস বলেন, আমরা তাকে বদলি করেছি। সে যদি এখনো সেই কর্মস্থলে থাকে তাহলে সেটা দেখার দায়িত্ব লোকাল অথরিটির। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে তাকে স্টান্ডরিলিজ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থল বন্দরের চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব তারিকুল ইসলাম বলেন, তিনি বেনাপোল বন্দরে নতুন যোগদান করেছেন। তবে এরমধ্যেই তার কাছে ট্রাফিক পরিদর্শক এনামুল হক মোল্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। যা তদন্তধীন। তবে, বদলি ও কর্মকর্তাদের হুমকি দেয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
উল্লেখ, দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানী ও রফতানি হয় বরাবরই বেশী। অথচ এখানকার বন্দর এবং কাস্টমস বিভাগের অনিয়ম,দুর্নীতি ও অব্যবস্থা কিছুতেই দূর হচ্ছে না। এনামুলের মত কয়েকজনের অপকর্মের জন্য কলঙ্কিত হচ্ছে অনেকে। নানা অভিযোগ ও বদলির আদেশ থাকা সত্বেও কিভাবে বছরের পর বছর বেনাপোল স্থল বন্দরে তার শক্ত অবস্থান, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সকলের কাছে এখন একটাই প্রশ্ন এনামুলের খুঁটির জোর কোথায়?

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত