যশোরের মুড়লী এলাকায় চকলেটের লোভ দেখিয়ে চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার আসামি আব্দুর রহমান আটকের ২২ দিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার খামখেয়ালীপনাকে দায়ী করছেন সবাই। আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্পর্শকাতর মামলা হওয়া সত্বেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অজ্ঞাত কারণে ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করেননি এবং তার ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেননি। আসামি দায় স্বীকার করলেও আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি। মামলা তদন্ত কর্মকর্তার এ খামখেয়ালীপনার কারণে মামলার ভীত দুর্বল হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। সে কারণেই কয়েক দিনের মাথায় জামিন পেয়েছেন অভিযুক্ত আব্দুর রহমান। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে।নিয়ম রয়েছে মামলা গ্রহণের পর ভিকটিমকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এ নিয়মের ধার ধারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। এবিষয়ে আদালত বলছেন মামলার নথিতে পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট না থাকার কারণেই জামিন পেয়েছে আসামি। এদিকে, অভিযোগ উঠেছে একটি চক্র আসামি পক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভিকটিমের জবানবন্দি মামলায় নথিভুক্ত করেনি। এছাড়া শিশুর ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়েও কারসাজি করা হয়েছে। প্রবেশন কর্মকর্তাও এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মনগড়া রিপোর্ট প্রেরণ করেছেন। এদিকে, সহজে জামিন পেয়েই ভয়ঙ্কর আচরণ শুরু করেছে ওই ধর্ষণ প্রচেষ্টা মামলার আসামি আব্দুর রহমান। সে মামলা তুলে নিতে শিশুকে খুন ও গুমের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগে জানাগেছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুন দুপুরে শহরতলীর মুড়লী খাঁপাড়ার আকবর আলীর আমবাগানে কয়েকটি শিশু খেলা করছিল। তাদের মধ্যে চার বছরের এক শিশুকে একই এলাকার রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুর রহমান অন্তু চকলেটের লোভ দেখিয়ে তাদের বাড়ির বাথরুমে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় আশপাশের লোকজন দেখে ফেললে সে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা ও পরিবারের পক্ষ থেকে শিশুটিকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এঘটনায় ২১ জুন কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন ভিকটিমের পিতা। পরের দিন ২২ জুন ভোর চারটায় মুড়লী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিকে আটক করে পুলিশ। একইসাথে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সে। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার তদন্তভার পড়ে কোতোয়ালী থানার এস আই মোকলেছুজ্জামানের উপর। অভিযোগ রয়েছে এর পর থেকেই শুরু হয় আসামিপক্ষের সাথে তার দেনদরবার। মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে আসামি পক্ষে ভূমিকা পালন করতে থাকেন তিনি।সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললে তারা জানান, স্বাভাবিক নিয়মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার ভিকটিমের জবানবন্দি আদালতে উপস্থাপন করবেন। একইসাথে ভিকটিমের মেডিকেল রিপোর্টও নথিতে সংযুক্ত করতে হবে। আসামি প্রাথমিকভাবে ঘটনার বিষয় যেহেতু স্বীকার করেছে সেহেতু আদালতেও তার জবানবন্দি রেকর্ড করার দায়িত্ব তদন্ত কর্মকর্তার। কিন্তু এ মামলার ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা এর কোনোটাই করেননি। এতে মামলার মেরিট দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে, গত ১৪ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক টিএম মুসা পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে আসামিকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। একইসাথে তিনি তার আদেশে উল্লেখ করেন, মামলার নথিতে ভিকটিমের ২২ ধারা জবানবন্দি নেই। নেই ডাক্তারি রিপোর্ট। অভিযুক্তের দোষ স্বীকারোক্তিও নেই। ফলে তার জামিন মঞ্জুর করা হলো।অন্যদিকে, শুধু পুলিশ তদন্ত কর্মকর্তাই নন, অভিযোগ রয়েছে প্রবেশন অফিসার তৌহিদুল ইসলামও আসামিপক্ষ নিয়েছেন। বাদী পরিবার জানান, তিনি ভিকটিম কিংবা ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা না বলেই একতরফা রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছেন। প্রবেশন অফিসার তার প্রতিবেদনেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ না করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তিনি প্রতিবেদনে আসামির বিষয়ে লিখেছেন সাড়ে তিন লাইন। লিখেছেন ১৬ বছরের আব্দুর রহমান কুরআনে হাফেজ। বাবা নেই। ভিটা বাড়ি নেই। মাঝে মাঝে মসজিদে নামাজ পড়ায়। এলাকার সবাই তাকে চরিত্রবান হিসেবেই জানে। যা সম্পূর্ণ মনগড়া বলে দাবি করেছে বাদীর পরিবার। তিনি তার প্রতিবেদনে লিখেছেন এলাকার লোকজনের সাথে বাদীপরিবারের ভালো সম্পর্ক ও তারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তিনি আরও লেখেন ধর্ষণের চেষ্টা ঘটনার সত্যতা তিনি পাননি।এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এস আই মোকলেছুজ্জামান বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তদন্ত চলছে। মামলায় ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণের বিষয়ে কথা বলবেন না বলে জানান তিনি। এছাড়া মেডিকেল রিপোর্টের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন তিনি। একইসাথে আসামি পক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।প্রবেশন অফিসার তৌহিদুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি তদন্ত করেছেন। উভয়পক্ষের সাথে কথা বলেই প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তিনি আব্দুর রহমানকে নির্দোষ দাবি করেন। একইসাথে আসামিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এবিষয়ে ভিকটিমের পিতা বলেন, আব্দুর রহমান জামিনে বের হয়ে তার মেয়েকে এবার খুন, গুমের হুমকি দিচ্ছে। সন্ত্রাসী নিয়ে রাতদিন বাড়ির পর এসে মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমতাবস্থায় পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিশেষ প্রতিনিধি