Wednesday, September 18, 2024

চাল নিয়ে চালবাজী, যশোরে তিন শতাধিক মিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা!

- Advertisement -

যশোরে শেষ পর্যন্ত সরকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে মিলাররা। বোরো মৌসুমে ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটন চাল দিবে বলে চুক্তি করলেও দিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার একশ’ পাঁচ মেট্রিকটন। তিনশ’ ৫১ টি রাইচমিল মালিক এটি করেছে। বাজারে ধানের দাম বেশির কথা বলে তারা চাল দেয়নি সরকারকে। সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ায় এবার চুক্তি ভঙ্গ করা মিলারদের তালিকা করার চিন্তা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরপর নেওয়া হবে ব্যবস্থা। এসব মিলাররা যাতে আগামীতে চুক্তিবদ্ধ হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হতে পারে। একইসাথে বাতিল করা হতে পারে রাইচমিলের লাইসেন্সও। সংগ্রহে হতাশার চিত্র ধানেও।এ বছর বোরো মৌসুমে যশোরে ১০ লাখ ৩০ হাজার সাতশ’ ৬৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। আর চাল উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ ৮০ হাজার তিনশ’ ছয় মেট্রিকটন। অথচ খাদ্যগুদামে ধান এবং চাল সংগ্রহের চিত্র হতাশাজনক। দাম বৃদ্ধির অজুহাতে মিলাররা চুক্তি অনুযায়ী চাল দেয়নি। এ কারণে ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটনের জায়গায় সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার একশ’ পাঁচ মেট্রিকটন। হতাশাজনক অবস্থা ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র তিন হাজার ছয়শ’ ৪৪ মেট্রিকটন। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার পাঁচশ’ ৬৬ মেট্রিকটন। নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর সরকার আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করার পরও কোনো কাজ হয়নি। ধান বিক্রি করতে আসেনি কোনো কৃষক। সরকার নির্ধারিত সময় শেষ হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ধারে কাছেও যায়নি। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করার নির্দেশ ছিল। কিন্তু যশোরে সেটি সম্ভব হয়নি। খাদ্যবিভাগ সংগ্রহ শুরু করে মে মাসের শেষের দিকে। ৩১ আগস্ট ছিল সংগ্রহের সর্বশেষ সময়। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে না যাওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করে। সেটি শেষ হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কৃষক এবং মিলার খাদ্যগুদামমুখি হয়নি। অথচ যশোরে এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর যশোর সদর উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনতে অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন চাওয়া হয়। গত বছর আমন মৌসুম থেকে যশোরে এ প্রক্রিয়ায় ধান কেনা শুরু হয়। আমন মৌসুমে সদর উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের কাছ থেকে দু’ হাজার আটশ’ ২৬ মেট্রিকটন ধান কেনে খাদ্য অধিদপ্তর। বোরো মৌসুমে আটশ’ ৭০ মেট্রিকটন বৃদ্ধি করে তিন হাজার ছয়শ’ ৯৬ মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সদর উপজেলায়। পুরো জেলায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার তিনশ’ ৭৪ মেট্রিকটন। সদর উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে আবেদনের পর লটারিতে যারা বিজয়ী হন কেবলমাত্র তারাই সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রির সুযোগ পান। সদর উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে আট হাজার ছয়শ’র মতো কৃষক আবেদন করেন। এরমধ্যে লটারিতে বিজয়ী হন দু’ হাজার আটশ’ ৬২ জন। বিজয়ীদের মধ্যে তিন ক্যাটাগরির কৃষক ছিলেন। তারা হচ্ছেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়। লটারিতে বিজয়ী হন এক হাজার আটশ’ ৫০ জন ক্ষুদ্র, ছয়শ’ ৯৫ জন মাঝারি এবং তিনশ’ ১৭ জন বড় কৃষক। ক্ষুদ্র কৃষক সর্বোচ্চ ২৫ মণ, মাঝারি কৃষক সর্বোচ্চ ৪০ মণ এবং বড় কৃষক সর্বোচ্চ ৬০ মণ করে ধান খাদ্যগুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করার সুযোগ পান। কিন্তু বিজয়ী এসব কৃষকের বেশিরভাগ খাদ্যগুদামমুখি হননি। কারণ হিসেবে খাদ্য ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। এ কারণে অধিকাংশ কৃষক ঝামেলায় জড়াতে চাননি।বোরো মৌসুমে লটারি বিজয়ী কৃষকের মধ্যে ছিলেন আরবপুর ইউনিয়নে দুশ’ ২৫, বসুন্দিয়ায় একশ’ ৮২, দেয়াড়ায় একশ’ ৭৩, নওয়াপাড়ায় একশ’ আট, উপশহরে তিন, কাশিমপুরে একশ’ ৪৪, লেবুতলায় দুশ’ ১০, ইছালীতে একশ’ ২৯, হৈবতপুরে দুশ’ ৪০, নরেন্দ্রপুরে দুশ’ ৪৭, রামনগরে দুশ’ ৬৭, চাঁচড়ায় একশ’ ৮৪, চুড়ামনকাটিতে চারশ’ ৩৯, ফতেপুরে একশ’ ৪২ ও কচুয়ায় একশ’ ৩০ জন এবং পৌরসভায় ৩৯ জন। নানান ঝামেলা এড়াতে কৃষক সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করেনি এ মৌসুমে। এত গেল বোরো ধান সংগ্রহের চিত্র। চাল সংগ্রহের চিত্র প্রায় একই রকম। বোরো মৌসুমে চাল দেওয়ার জন্যে জেলার তিনশ’ ৫১ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হন। তারা ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটন চাল দিবেন বলে চুক্তি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তির প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন তারা। ধানের দাম বেশি উল্লেখ করে পুরোপুরি চাল দেয়নি মিলাররা। অথচ চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেক মিলারের চাল দেওয়া বাধ্যতামূলক। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তি করার পরও যেসব মিলার বিভিন্ন অজুহাতে চাল দেয়নি তাদের তালিকা তৈরি করা হবে। আগামীতে তারা যাতে কোনোভাবে চুক্তিবদ্ধ হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করবেন তারা। একইসাথে মিলের লাইসেন্সও বাতিল করা হতে পারে। যশোরে এ বছর ২৪ টি অটো রাইচমিল এবং তিনশ’ ২৭ টি হাসকিং মিল মালিক চাল দিবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন।সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে কথা হয় যশোর সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সাথে। তিনি জানান, বোরো মৌসুমে তার গুদামে তিন হাজার আটশ’ ৫৮ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল, ছয়শ’ ৭৩ মেট্রিকটন আতপ চাল এবং দু’ হাজার দুশ’ ৫১ মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে। এই দুরবস্থার মধ্যে এমন সংগ্রহে খুশি তিনি। এ বিষয়ে যশোর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে। ধানের দাম বেশির কথা বলে চুক্তিবদ্ধ মিলাররা পুরোপুরি চাল দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এখন খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত