ঢাকার সড়কে ঝুলে থাকা ক্যাবল টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের ঝুলন্ত তারগুলো এবার সড়কের ওপর থেকে সরে যাচ্ছে। নভেম্বরের মধ্যেই এসব তার যাবে মাটির নিচে। ফলে ডিসেম্বর থেকেই জঞ্জালমুক্ত সড়কের নতুন ঢাকা পাবে নগরবাসী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অনঢ় অবস্থানেই এবার বদলে যাচ্ছে ঢাকা শহর। ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, নভেম্বরের মধ্যে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টেলিভিশনের সব ঝুলন্ত তার মাটির নিচে প্রতিস্থাপনে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছেন।রোববার নগর ভবনে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও ক্যাবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এই তথ্য জানান।
ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, তারের যে জঞ্জালে ঢাকা শহর সয়লাব, সেই জঞ্জাল থেকে আমরা ঢাকা শহরকে মুক্ত করতে চাই। সেজন্যই আমাদের আজকের এই আলোচনা। আমরা সবাই একমত হয়েছি। আমাদের প্রাণের এই ঢাকাকে সুন্দর ঢাকা হিসেবে পরিণত করতে চাই। আমরা যৌথভাবে কাজ করলে সেটা সম্ভব, সে ঐকমত্যে আমরা উপনীত হয়েছি।সোমবার থেকে আইএসপিএবি ও কোয়াব তাদের নিজ উদ্যোগে এসব ঝুলন্ত তার ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যেতে কাজ শুরু করবে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার বলেন, ধানমন্ডি এলাকা হতে এই কার্যক্রম শুরু হবে এবং পুরো দক্ষিণ সিটিতে নভেম্বরের মধ্যে তারা এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তাদেরকে এই কাজে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এ কাজে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, বিনা খরচে তাদের সড়ক, ফুটপাত এমনকি প্রয়োজন হলে নর্দমা অর্থাৎ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের যেসব অবকাঠামো ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সেসব অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হবে।পুরো দক্ষিণ সিটিকে নভেম্বরের মধ্যে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল হতে মুক্তি দেয়ার আশাবাদ পুনর্ব্যক্ত করে মেয়র তাপস বলেন, তারা নিজ খরচে, নিজ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির নিচ দিয়ে তারের সংযোগ নেবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে উপরে ঝুলন্ত তার কেটে দেবেন। আর এটা আগামী নভেম্বরের মধ্যেই তারা শেষ করবেন বলে আমাদের কমিটমেন্ট দিয়েছেন। সে কারণেই আমরা আজ হতে আর তার কাটব না।আইএসপিএবি সভাপতি এম আমিনুল হাকিম বলেন, আজ থেকেই আমরা ঝুলন্ত তার নামিয়ে মাটির নিচে সংযোগের কাজ শুরু করে দেব। আশা করি নভেম্বরের মধ্যেই পারব।
সেজন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রাহকদের ফি বাড়ানো হবে না। আমরা আগের খরচেই সংযোগ রাখতে পারব।রাজধানীর সড়কে সৌন্দর্য বাড়াতে এবং কম খরচে নিরবিচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে ২০০৮ সালে ঝুলন্ত তার অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। কমিশনের সাথে পরবর্তীতে এই উদ্যোগ সফল করতে যোগ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এই দুই প্রতিষ্ঠান ১২ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েছে রাজধানীর জঞ্জাল সরাতে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিটিআরসি ও বিদ্যুৎ বিভাগ।ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও ক্যাবল অপারেটরদের (ডিস সংযোগ প্রদানকারী) আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে বার বার। কমিটি গঠন করে মাঝে মাঝে দু’একটি অভিযান চালিয়ে কাটা হয়েছে ঝুঁলন্ত তার। কিন্তু সড়কগুলো আগের রূপ ফিরে পেতে সময় নেয়নি ২-৪ ঘণ্টার বেশি।সর্বশেষ রাজধানীর ঝুলন্ত ইন্টারনেট ও ডিসের তারসহ সব তার অপসারণের জন্য ৩০ মে পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই সময়ের মধ্যে তার অপসারণ না করলে তার কেটে দেয়াসহ সংশ্লিষ্ট আইএসপি ও ক্যাবল অপারেটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
অনলাইন ডেস্ক