বাঘারপাড়া প্রতিনিধিঃ বাঘারপাড়া উপজেলার নতুন প্রশাসনিক ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ও কক্ষের সজ্জিতকরণ (ইনটেরিয়র) প্রকল্পে অনুসন্ধানে অনিয়মেরর নানা তথ্য উঠে এসেছে। নির্দিষ্ট ডিজাইন মাফিক কাজ না করেই প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা লুট করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন কক্ষের চেয়ার টেবিল ও আসবাবপত্র না বুঝে নিয়েই ঠিকাদারের বিল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সর্বশেষ জামানতের টাকাও ছাড় করে নিয়েছেন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের নির্মান শুরু হয়ে ২০২০ সালে শেষ হয়। এছাড়া ২০২১ সালে ভবনের নিরাপত্তা দেওয়াল, কনফারেন্স রুম সজ্জিতকরণ, কলাপসিবল গেট এবং ছাদে রঙ্গিন টিন বাবদ দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ভবনের নিরাপত্তা দেওয়াল ও সেমিনার কক্ষের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩শ ৮৬ টাকা। দরপত্র অনুযায়ি এ প্রকল্পের কাজ পায় ঝিনাইদহের রিয়াজউদ্দিন এন্টারপ্রাইজ। এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারের কক্ষসহ দুটি অফিসকক্ষ সজ্জিতকরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৬ লাখ ৯০ হাজার ২শ ৯০টাকা। এ প্রকল্পের কাজ পায় ঝিনাইদহের আল-আমিন কনস্ট্রাকশন। সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে প্রকল্পের নকশা (ডিজাইন) অনুযায়ি কাজ হয়নি। তবে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর, একই বছরের ৬ ডিসেম্বর এবং চলতি ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি মোট তিন কিস্তিতে টাকা তুলে নিয়েছেন প্রকল্পের ঠিকাদাররা। উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদ বরাদ্দের অধিকাংশ উপকরণ না বুঝে পেলেও ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি জামানতের টাকাও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে।
সরেজমিনে গত কয়েকদিন উপজেলা পরিষদে ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ভবনের ইনটেরিয়র (সজ্জিতকরণ) প্রকল্পের আওতায় সভাকক্ষে ১.৮২৯ ফুট দৈর্ঘ ও ১.৫২৪ ফুট প্রস্থের ডিজিটাল সাইন বোর্ডে ২ লাখ ১৫ হাজার ৯শ ২২ টাকা ও প্রজেক্টরের ১ লাখ ৭ হাজার ২শ ৫০টাকা দাম ধরা হয় । নির্ধারিত এ উপকরণ সরবারহের পরিবর্তে রঙিন ডিজিটাল টেলিভিশন প্রদান করেন করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারের দুই কক্ষসহ দুটি অফিস কক্ষে জন্য উন্নত মানের ফ্লোর কার্পেট সরবরাহ বাবদ ১লাখ ৪০ হাজার ৯শ ৪২ টাকা ও ১টি সোফা সেটের জন্য ৬৭ হাজার ৫শ টাকা, ৪ কক্ষের প্রত্যেকটি কক্ষের জন্য একটি বস চেয়ার বাবাদ ২৭ হাজার টাকা, ৪টি এক্সিকিউটিভ চেয়ার বাবদ ৫১ হাজার ৩শ, ১টি এক্সিকিউটিভ টেবিল বাবদ ৬০ হাজার ৭শ ৫০ টাকা ও কেবিনেট বাবদ ৫০ হাজার ১শ ১২ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ঠিকাদার এসব কোনো কিছু সরবারহ না করে বিল তুলে নিয়েছেন। ভবনের সামনে ২০টি গার্ডেন লাইট বাবদ ৭৯ হাজার ১শ ৯৪ টাকা বরাদ্দ রাখার হয় যার প্রতিটির দাম ৩ হাজার ৯শ ৬০ টাকা। এখানে ১২টি গার্ডেন লাইট সরবরাহ করেছেন ঠিকাদার। বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে সরবরাহকৃত লাইটগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়া প্রকল্প অনুযায়ি এ ভবনের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনিক ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে কলাম করে ইটের দেওয়াল নির্মাণ করে গ্রীল দেওয়ার কথা । যার কলাম, বাুল,সিমেন্ট, ইট, রড ও শ্রমিকের মজুরী বাবদ ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭ শ ৪৭ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এতে গ্রীলের দাম ১লাখ ২০ হাজার ১শ ৬৬ টাকা ধরা ছিলো। তবে সেসব নকশা বাদ দিয়ে ভবনে ছিদ্র করে গ্রীল দেওয়া হয়েছে। ভবনের মুল প্রবেশ পথে কলাপসিবলের মানও নকশা অনুযায়ি সরবরাহ করেননি ঠিকাদার। দুই ইউনিটের মাঝে বৃষ্টির পানি পড়া বন্ধ করতে ছাদে যে মানের রঙ্গিন টিন নকশায় রাখা ছিলো তাও সঠিকভাবে সরবরাহ করেননি ঠিকাদার। এ প্রকল্পের কাজ শুরুর থেকে ছিলেন তখনকার উপজেলা নির্বাহি অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান। তিনি বর্তমানে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য জাপানে আছেন। যার কারনে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রককল্পের কাজ সম্পূর্ন হয়নি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান বলেন কাজ সব ঠিকঠাক হয়েছে।
এব্যাপারে জানতে চেয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার হোসনে আরা তান্নি সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকদিন যাবত যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আর কে-০৬