বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। নতুন করে ব্যাংকটিতে তিনজন শেয়ারধারী পরিচালক ও দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। একই সঙ্গে তিনি প্রায় দেড় দশক ধরে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক্সিম ব্যাংকের পুরোনো পর্ষদ ভেঙে নতুন করে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন শেয়ারধারী পরিচালক মো. নুরুল আমিন, নজরুল ইসলাম স্বপন ও অঞ্জন কুমার সাহা। এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এস এম রেজাউল করিম ও সনদধারী হিসাববিদ খন্দকার মামুনকে। নতুন নিয়োগ পাওয়া পাঁচ পরিচালকের মধ্য থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতের জন্য জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ বা এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলো।
সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগ দিয়ে আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যাঁরা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না। টাকা উদ্ধারে আইনগত যত পন্থা আছে, সবই অনুসরণ করা হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। নতুন গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুর যোগ দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সাতটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটি ব্যাংকই এ খাতের আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। গত ১৫ বছরে বিভিন্ন উপলক্ষকে সামনে রেখে ব্যাংকগুলো থেকে চাঁদা তুলে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়ার কারণে তিনি আলোচনায় ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো ও নীতি পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে আসছিলেন তিনি। সর্বশেষ বিএবির পক্ষ থেকে ‘শেখ হাসিনা আন্তব্যাংক ফুটবল টুর্ণামেন্ট’ আয়োজন করে তিনি সমালোচিত হন। সরকার পরিবর্তনের পর নজরুল ইসলাম মজুমদারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী নাছরিন ইসলাম ও তাঁদের পুত্র-কন্যার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক ।