আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে আংশিক সাফল্য অর্জিত হলেও বিএনপির লক্ষ্যপূরণের জন্য আরও বহু পথ চলা এখনো বাকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আমাদের আরও বহু সামনে যেতে হবে। অনেক পথ চলা বাকি রয়েছে। এই পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে। এই পথ যদি আমরা সঠিকভাবে পাড়ি দিতে পারি, তাহলেই আমরা বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, যেটি খর্ব করা হয়েছিল, সেটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হব। এই পথ ঐক্যবদ্ধভাবে পাড়ি দিতে পারলে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। জনগণের সামনে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের উদ্দেশ্য। সেজন্যই এত ত্যাগ-আন্দোলন।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে আমরা দেশের বিভিন্ন বিষয়ে আইন, বিচারসহ সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের সামনে আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং অন্য আন্দোলনকারী দলগুলোকে নিয়ে জাতির সামনে একত্রিতভাবে ৩১ দফার একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছি। সেখানে অনেক বিষয় আছে। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশকে যদি এগিয়ে নিতে হয়, মানুষের যদি ভাগ্য পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে আজকে শুধু আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছি, তাতেই থেমে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার অর্জন যেমন আমাদের করতে হবে, একইভাবে আমাদের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়েও চিন্তা করতে হবে।
পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে শেখ হাসিনা : দেলাওয়ার হোসেন
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ। কাজেই আজকে এবং আগামীদিনে যদি সঠিকভাবে সঠিক কাজটি করতে সক্ষম হই, তাহলে অবশ্যই রাজনৈতিক মুক্তি অর্জনের পাশাপাশি দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতেও সক্ষম হবো। আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে যদি এগোতে পারি, তবেই এটা সম্ভব হবে। স্থানীয় সুযোগ-সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, বেলকুচি, চৌহালী, এনায়েতপুর আর কামারখন্দের কথা বললেই তাঁতশিল্পের কথা মনে হয়। এখান থেকে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, বিছানার চাদর তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে তাঁতশিল্পের পাশে এসে দাঁড়াবে। ১৯৯১ সালে সেই খালেদা জিয়া ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ, ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ মওকুফ ও ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করেছিলেন। বিএনপি চেষ্টা করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এই এলাকায় আরও কয়েকটি সম্ভাবনাময় পণ্য রয়েছে। আমরা জানি, চৌহালীতে চীনাবাদাম হয়। চীনাবাদাম শুধু এই এলাকায় থাকবে? চৌহালীর চীনাবাদাম বিদেশে রপ্তানি কেন হবে না। আমাদের এ বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। আমি যখন বগুড়া যেতাম, সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে মাইলের পর মাইল সরিষার মাঠ দেখতাম। পৃথিবীর বহু দেশের সরিষা অন্য দেশে রপ্তানি হয়। এই সরিষার উৎপাদন বাড়াতে হবে। শুধু দেশের চাহিদা নয়, বিদেশেও রপ্তানি করা হবে ইনশাআল্লাহ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভা প্রসঙ্গে তারেক বলেন, যে মানুষগুলোকে সামনে রেখে আমরা এই সভার আয়োজন করেছি, এই মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই হারিয়ে গেছেন আমাদের মাঝখান থেকে, অনেকেই বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই মানুষগুলোর আত্মদান দেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য। কিছুদিন আগেও যাদের কথা বলার অধিকার ছিল না। সমাবেশে কষ্ট করে উপস্থিত হওয়ার জন্য নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণকে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান।বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বেলকুচি উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বনি আমিন ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জু সিকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জেলা শাখার সভাপতি রুমানা মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, উপদেষ্টা ডা. এমএ মুহিত, বেলকুচি উপজেলার আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম গোলাম, পৌর কমিটির আহ্বায়ক আলতাব প্রামাণিক, এনায়েতপুর থানার আহ্বায়ক মন্টু সরকার, চৌহালী উপজেলার সভাপতি জাহিদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ময়নাল কারি, জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল কায়েস, ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, মহিলা দলের সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন হাসি প্রমুখ।
তারেক রহমানের সভা উপলক্ষে সকাল থেকেই ট্রলার এবং ছোট ছোট নৌকায় যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী এ স্মরণসভায় যোগ দিতে আসেন। সড়কপথেও বিপুলসংখ্যক মানুষ সভায় এসে যোগ দেন। স্মরণসভা কেন্দ্র করে যমুনা সেতু থেকে এনায়েতপুর পর্যন্ত লাগানো হয় অসংখ্য তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুন। মাঝে বৃষ্টির কারণে কিছুক্ষণ সমাবেশ স্থগিত ছিল।
অনলাইন ডেস্ক ।