সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উত্তরা বাংলাদেশ মহিলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তার ছেলে ছেলে মাহি বি চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পরে রাতে বি চৌধুরীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, মৃত্যুর সময় হাসপাতালে বিছানার পাশে স্ত্রী, মেয়ে ও একমাত্র ছেলে মাহি বি চৌধুরীসহ সবাই পাশে ছিলেন।
বি চৌধুরীর মৃত্যুর পরবর্তী কার্যক্রম বিকল্পধারা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হবে শনিবার সকালের দিকে।
এদিকে, বি চৌধুরীর মৃত্যুর খবর শুনে রাজনৈতিক মহলে শোক নেমে এসেছে।
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত বুধবার (২ অক্টোবর) তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ওই হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট অপর্ণা রহমান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মারুফ বিন হাবিব ও শায়লা চৌধুরীর তত্ত্বাবধায়নে সাবেক রাষ্ট্রপতির চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৯৫ বছর বয়সী সাবেক রাষ্ট্রপতি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি আগেও একাধিকবার এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
১৯৭৮ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন। জিয়াউর রহমান সরকারে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বিএনপির মনোনয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। পরে ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দলটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী বি চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের সুপরিচিত মুন্সেফবাড়ির নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার মজিদপুর দয়হাটা গ্রামে।
বি. চৌধুরী একজন কৃতি ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো এবং এফআরসিপি লাভ করেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে জাতীয় সংসদের উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ওই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। একই বছরের ১৪ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তবে রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।
তার স্ত্রীর নাম হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। তার বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী, পেশায় আইনজীবী। ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী, পেশায় চিকিৎসক এবং ঢাকার উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। একমাত্র ছেলে মাহী বি. চৌধুরী রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য।
-অনলাইন ডেস্ক