প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশে আসবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। দুই দেশের মধ্যকার ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে অধ্যাপক ইউনূস এ বছরের আগস্ট মাসে তাকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকা আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকালে তিনি ঢাকা সফর করবেন।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) গণমাধ্যম ইউএনবির করা একটি প্রতিবেদনে এসব কথা জানা গেছে।
এদিন দুপুর ২টা বা তার পরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি সরাসরি একটি হোটেলে যাবেন। সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা থাকবেন তিনি।
বিষয়টি ইউএনবিকে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
মালয়েশিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রী প্রায় এক দশক পর বাংলাদেশ সফর করবেন এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই বাংলাদেশে কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম সফর।
একই হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং পরে একটি যৌথ ব্রিফিং করা হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বৈঠকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, উচ্চশিক্ষা সহায়তা, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট খাতগুলো তুলে ধরা হবে।
রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া এবং রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে।
এ ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আসিয়ানে বাংলাদেশকে ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়টিও বিশেষভাবে উত্থাপন করা হবে।
‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় পৌঁছালে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল অনুযায়ী তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হবে।
সফরের আগে উপদেষ্টা বলেন, এই সফর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর করা এবং টেকসই বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী, পরিবহন উপমন্ত্রী, ধর্ম উপমন্ত্রী, দুজন সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশে অষ্টম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ।
গত আগস্টে মালয়েশিয়ার নেতা সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তার পুরনো বন্ধু অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানান।
অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে মালয়েশিয়ার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। মালয়েশিয়ার অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সেন্টার রয়েছে, যা সামাজিক ব্যবসার ধারণা এবং তার থ্রি-জিরো ধারণাকে প্রচার করে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাই আমি তাকে আশ্বস্ত করেছি, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তা পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি মালয়েশিয়ার কোম্পানি বাংলাদেশে ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং এখন শিক্ষাসহ আরও বিনিয়োগে আগ্রহী।
মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় একটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গাড়ি বিতরণ ও সংযোজনের জন্য চুক্তি করেছে।
মালয়েশিয়া বলছে, তারা চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়া একটি পছন্দের গন্তব্য হতে পারে। তারা বলেছে, বাংলাদেশিরা সাশ্রয়ী মূল্যে দেশটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিতে পারে।
অনলাইন ডেস্ক