Tuesday, October 15, 2024

প্রতিমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছিল ‘ঘুষের হাট-বাজার’

- Advertisement -

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ঢাকার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন ছিল ঘুষ লেনদেনের ‘হাট-বাজার’। প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পিয়ন থেকে শিক্ষক পর্যন্ত নিয়োগ ও প্রকল্পের ঘুষের টাকা লেনদেন হতো ওই ভবনে বসেই। তার স্ত্রী ও ভাগিনাসহ নিকট আত্মীয়রা ছিল দুর্নীতির মাধ্যম। গত বছরের ডিসেম্বরে বাধ্য হয়ে ঘুষের টাকা ফেরতও দিতে হয়েছিল জাকির সিন্ডিকেটকে। কুড়িগ্রাম থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা অনুসন্ধানে বহু অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নিজ নামে রৌমারী এলাকায় ১০ শতাংশ জমিসহ দোতলা বাড়ি আছে। রৌমারী-কুড়িগ্রামে ৩.২৮ একর জমিতে মার্কেট ও চাতাল রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যবসায় বিনিয়োগও রয়েছে ওই এলাকায়। তার নামে ৫ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে কুড়িগ্রামে ২৬টি বিদ্যালয় শিশু কল্যাণ ট্রাস্টে অর্ন্তভুক্তি অনুমোদন দেন তিনি। যেখানে ঘুষের লেনদেন হয় বলে তথ্য রয়েছে। দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক এমপি জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সীমান্তবর্তী রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারীতে মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যু, তদবির বাণিজ্য ও শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে। রাতের আঁধারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে জমি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ অবৈধ উপায়ে সম্পদ দখলের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী সুরাইয়া সুলতানা ১৪ বছর ধরে কর্মস্থলে না গিয়েও নিয়মিত বেতনভাতা তোলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় এলাকার ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগ রয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।

 

দুর্নীতির বড় উদাহরণ গত ডিসেম্বরে ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় রাজধানীর মিন্টো রোডে প্রতিমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে তিন পাওনাদারকে বেধড়ক পেটানোর ঘটনা। সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নামে ঘুষকাণ্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। পরে চাকরিপ্রত্যাশী আবু সুফিয়ানকে ঘুষের প্রায় ১০ লাখ টাকা টাকা ফেরতও দিতে হয় প্রতিমন্ত্রীর চালক ও তার ভাগিনাকে। অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জানা যায়, নামে-বেনামে তার ঢাকায় একাধিক বাড়ি, রংপুরে বাড়ি, কুড়িগ্রাম জেলা শহরে বহুতল বাড়ি, রৌমারীতে দুটি বাড়ি এবং রাজিবপুর উপজেলায়ও রয়েছে একটি বাড়ি। চারটি মার্কেট, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে ৫টি স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। মিল, চাতাল, খামারবাড়ি-সবই আছে তার। যার মূল্য কয়েকশ কোটি টাকা। এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানান, সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ও তার আশীর্বাদপুষ্টরা অনেক ভূমি ও সম্পদ দখলের ঘটনায় জড়িয়েছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে হলফনামায় জাকির হোসেনের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার (স্ত্রীর আয় ৯০ হাজার টাকাসহ)। নগদ অর্থসহ মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ১৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের নির্বাচনী হলফনামায় আয় দেখানো হয় ১৪ লাখ ৪২ হাজার ২৯৫ টাকা। নগদ অর্থসহ সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৩ টাকা। আর ২০১৮ সালে নির্বাচনি হলফনামায় আয় কমিয়ে দেখানো হয় ২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। আর নগদ অর্থসহ সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ৫ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার ৬৩ টাকা।

অনলাইন ডেস্ক ।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত