অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ-বাণিজ্যে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন যশোর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের ইপিআই টেকনিশিয়ান আফজাল হোসেন। দীর্ঘ আট বছর ধরে একই স্থানে জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ এই কর্মচারী। সেই সাথে রয়েছে ভুরি ভুরি নারী কেলেঙ্কারীরও অভিযোগ। তার স্ত্রী সৈয়দা বিনতে সাহাবাও কম না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জয়পুরহাট থেকে যশোর সদর উপজেলায় যোগদান করেন। এখানে যোগদান করেই আলজাল হোসেন হাতে আলাউদ্দিনের চেরাগ পান। নিজেকে সব সময় (আওয়ামী লীগ কর্মী/ছাত্রলীগের নেতা) পতিত সরকারের দোসর বলে পরিচয় দিতে থাকেন। আর এতে করেই তার ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে। অফিসে চালাতে থাকেন রামরাজত্ব। কর্তা থেকে কর্মচারী সবাই থাকেন টটস্থ। নিজের ইচ্ছামত শুরু করেন অনিয়ম-দুর্নীতি। এমন কোন খাত নেই যে খাত থেকে টাকা নেননি আফজাল হোসেন। দীর্ঘ ৮ বছর একই স্থানে চাকরি করার কারণে তার বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ। সর্বশেষ তার দুর্নীতির শিকার হয়েছেন প্রায় অর্ধশত যুবক।
প্যারাডাইজ নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে সদর উপজেলার ৬০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে লোক নিয়োগের নামে করেছেন কোটি কোটি টাকার ঘুষ-বাণিজ্য। তার হাত ধরেই হয়েছে সব নিয়োগ। নিয়োগের পুরো টাকাই নিজেসহ পুরো অফিসের কর্তা থেকে সকলে ভাগবাটায়ারা করেছেন। ঘুষের টাকায় সদর উপজেলা পরিষদের পিছনে নামে-বেনামে তিনটি প্লটে ১৩ শতক জমি কিনেছেন। দুটি ৩ শতকের ও একটি ৭ শতকের। কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন এসব বসতি জমি। প্যারাডাইজে নিয়োগের নামে সর্বশান্ত হওয়া যুবকরা আফজাল হোসেনের বাড়ি ঘেরাও করলে স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকে ম্যানেজ করে ছাড় পান। বর্তমানে আফজাল হোসেন বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এখন নব্য বিএনপি সাজার চেষ্টা করছেন।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য সহকারীদের সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচির কোন বিল দেন না। পোর্টারদের পরিবহন বিল না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া এইচপিভি ও ভিটামিন এ+ ক্যাম্পাইনের টাকা নিজে আত্মসাৎ করে চলেছেন। করোনাকালীন সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য খাত থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
সূত্র জানায়, আফজালের হাত থেকে রক্ষা পায়নি নিজ বাড়ির মালিক। যে বাড়িতে আফজাল ভাড়া থাকেন সেই বাড়ির মালিক চায়না বেগমকে ভুল বুঝিয়ে ৫ শতক জমিসহ বাড়ি নামমাত্র মূল্যে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আফজাল হোসেন ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে নিজের স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে অর্ধকোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন জমি। এছাড়া যশোর শহরে রয়েছে আলিশান বাড়ি। কোটি টাকা দিয়ে কেনা এই বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আফজালের হাত থেকে রক্ষা পায়নি নিজ বাড়ির মালিক। যে বাড়িতে আফজাল ভাড়া থাকেন সেই বাড়ির মালিক চায়না বেগমকে ভুল বুঝিয়ে ৫ শতক জমিসহ বাড়ি নামমাত্র মূল্যে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আফজাল হোসেন ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে নিজের স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে অর্ধকোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন জমি। এছাড়া যশোর শহরে রয়েছে আলিশান বাড়ি। কোটি টাকা দিয়ে কেনা এই বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, গেল সেপ্টম্বর মাসে যশোর শহরের বেজপাড়া এমএসটিপি স্কুল এলাকায় ৭তলা বিল্ডিং-এর চতুর্থ তলায় ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে অত্যাধুনিক একটি ফ্লাট কিনেছেন স্ত্রীর নামে।
সূত্র জানায়, করোনাকালীন সময়ে খোলাবাজারে করোনার টিকা বিক্রি করেছেন। যারা টিকা নিতে এসেছে তাদের কাছ থেকে আদায় করেছেন মূল্য। বিভিন্ন খরচের কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিয়েছেন টাকা। করোনা শেষ হওয়ার পর থেকে যাওয়া সিরিঞ্জ অফিসের এক কর্মচারীকে দিয়ে বিডিআর ক্যাম্পের সামনে রণির ভাংড়ির দোকানে বিক্রি করেছেন।
সূত্র মতে, সম্প্রতি আফজাল হোসেন একজনকে ঘুষের টাকা ফেরত দিচ্ছেন এমন একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সব চিত্র ফুটে উঠেছে।
সূত্র জানায়, আফজাল হোসেনের চাকরি শুরু হয় বরিশালে। সেখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় নারী কেলেঙ্কারীর জন্য ধরা খান। এখন থেকে তাকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বদলি করা হয়। সেখান থেকে বদলি হয়ে যশোর সদরে আসেন।
সূত্র জানায়, আফজাল হোসেনের চাকরি শুরু হয় বরিশালে। সেখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় নারী কেলেঙ্কারীর জন্য ধরা খান। এখন থেকে তাকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বদলি করা হয়। সেখান থেকে বদলি হয়ে যশোর সদরে আসেন।
সূত্র জানায়, আফজাল হোসেন একজন নারী লোভী কর্মচারী। তার অফিসে অর্ধশতর বেশি নারী কর্মচারী রয়েছে। এসব নারী কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে সর্বশান্ত পর্যন্ত করেছেন। ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। তার কথা কেউ রাজি না হলে তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা পর্যন্ত করেছেন আফজাল হোসেন। চাকরি ও সম্মানের ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়নি। নিজ অফিসের এক নারীর সাথে অসামাজিক কার্যকলাপ করার সময় হাতে নাতে ধরা পড়ে আফজাল হোসেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদের একটি সরকারি অফিসের এক নারী কর্মী (পিয়ন) সাথে রয়েছে অবৈধ সম্পর্ক। নারী কেলেঙ্ককারী নিয়ে অভিযোগ দিলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সূত্র জানায়, আফজাল হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা বিনতে সাহাবা স্বাস্থ্য সহকারী। স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে তিনি কখনো ঠিকমত ডিউটি করেন না। স্বামীর প্রভাবে নিজে প্রভাব খাটান সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে। কাজে না করেই নিয়মিন বেতন-ভাতা তুলছেন এই স্বাস্থ্য কর্মী। অফিসে আসেন নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হয়রাণিসহ লাঞ্ছিত করা হয়। আফজাল হোসেন যশোরে বদলি হওয়ার পর তাকেও বরিশাল থেকে যশোরে বদলি করে নিয়ে আসেন।
অভিযোগের বিষয়ে আফজাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করুক। তদন্ত করে তারা যে ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। এছাড়া আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আছেন, তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।
রাতদিন সংবাদ
- Advertisement -