শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় নিরপরাধ ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।গেল রোববার পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন গলাচিপার বনানী এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে ওই বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করেন। পরে ওই দিনই একটি চেক ডিজঅনার মামলায় তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।মামলার সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা থানাসংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্টসের মালিক মো. হাবিবুর রহমান, পিতা নূর মোহাম্মদ মাস্টার, মুজিবনগর রোড, গলাচিপা পৌর শহরের বাসিন্দা। তিনি ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ব্র্যাক থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন।এ সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের (হিসাব নং-২২০০) ঋণের সমপরিমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন। কিন্তু তিনি ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি ১০ এপ্রিল ২০১৩ সালে ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়।পরবর্তিতে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ ২ মে ২০১৩ তারিখে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু তিনি ব্র্যাক থেকে ঋণ গ্রহণ করেননি মর্মে ১৯ জুন ২০১৩ তারিখ লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। তারা ঋণ গ্রহিতা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ওই মামলায় পটুয়াখালীর যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন। রায়ে হাবিবুর রহমানকে ১ বছরের কারাদণ্ডসহ ঋণের দ্বিগুণ অর্থ অর্থাৎ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন।রায়ের দিন ঋণগ্রহিতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন গলাচিপা বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে গত রোববার তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন এবং ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়া হাবিবুর রহমানের পিতার নাম নূর মোহাম্মদ পণ্ডিত।
ঋণগ্রহিতা হাবিবুর রহমান প্রায় ৫ বছর আগে গলাচিপা থানাসংলগ্ন সদর রোড থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে মহিলা কলেজ সড়কে নতুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তিনি ব্যবসার ধরন পাল্টে এখন মুদি ব্যবসা শুরু করেছেন।এ ব্যাপারে জেলে থাকা হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. আবু সালেহ বলেন, আমার বাবা সদর রোডে কোনোদিন ব্যবসা করেননি, আর আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও গ্রহণ করিনি। আমরা দুই ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করি। বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠাই। তা দিয়ে তারা সংসার চালান। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছিলো কিন্তু তারা শোনেনি।গলাচিপা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহিন মিয়া জানান, খবরটি জানার পর আমি থানায় গিয়েছি এবং পুলিশকে বিষয়টি বলেছি। কিন্তু আমি থানায় যাওয়ার আগেই তারা ওই বৃদ্ধকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে।এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন বলেন, আদালত থেকে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠাই। কিন্তু পরে জানতে পারি তিনি প্রকৃত আসামি নন। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমার ভুল হয়েছে। তবে নিরপরাধ ওই বৃদ্ধকে জেল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি।এ প্রসঙ্গে গলাচিপা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আসামির নাম ও পিতার নামে মিল থাকায় সরল বিশ্বাসে এএসআই আল-আমিন তাকে গ্রেপ্তার করেন। বিষয়টি আমরা সংশোধন করে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ওই বৃদ্ধকে দ্রুত কারামুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অনলাইন ডেস্ক