Friday, March 29, 2024

সিলগালার পর নাম পাল্টে ল্যাবএইড থেকে হয় পিস্ হাসপাতাল

- Advertisement -

 

- Advertisement -

নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত অবৈধ পিস হসপিটালে এবার ভুল চিকিৎসায় রোগী মুন্নি খাতুনের (২৪) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় মৃতের স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাপক হট্টগোল করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্পতিবার গভীররাতে ঘটনাটি ঘটে।

শুক্রবার লাশের ময়নাতদন্ত যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। মুন্নি যশোর সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের আল আমিন হোসেনের স্ত্রী।

স্থানীয়রা বলছেন, পিস হসপিটাল এর আগে ছিলো ল্যাব এইড হসপিটাল। ভুল চিকিৎসা, চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে ল্যাব এইড হসপিটাল সিলগালা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরপর ল্যাব এইড হয়ে যায় পিস হসপিটাল।

জানা গেছে, গুলেন বারি সিনড্রোম (জিবিএস) রোগে আক্রান্ত মুন্নিকে মঙ্গলবার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোসলেম উদ্দিনের মালিকানাধীন পিস হসপিটালে ভর্তি করা হয়। রোগী মোসলেম উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভর্তির পর থেকে রোগীর অন্য ওষুধের সাথে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন মেরোপেনেম পুশ করা হচ্ছিলো।

রোগীর স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে একজন নামধারী সেবিকা মুন্নির শরীরে ৬ষ্ঠ ডোজের ইনজেকশন ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর রোগী ছটফট করে মারা যান। স্বজনের অভিযোগ, ত্রুটিপূর্ণভাবে ইনজেকশন পুশ করার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে হট্টগোল শুরু করেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগী মুন্নির শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন রুবি নামে একজন। তিনি ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী সেবিকা নন। রুবি রোগীর শরীরে ভুলভাবে ইনজেকশন পুশ করার কারণে এ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটতে পারে।

পিস হসপিটাল ল্যাব এইড হাসপাতাল থাকাকালীন সময় থেকে ডাক্তার মোসলেম উদ্দিন রোগীদের ভুল চিকিৎসা ও প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেন। এমনি এক ঘটনার শিকার যশোর শহরের মোল্যাপাড়া বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ তার পিতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ আব্দুল মাবুদকে ভুল চিকিৎসা ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন। এ ঘটনায় ডা. মোসলেম উদ্দিন আটক হন। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপরেও তার অবৈধ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ভুল চিকিৎসা থামেনি। সর্বশেষ ভুল চিকিৎসায়মারা গেলেন মুন্নি নামে এক রোগী।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, ভুল অস্ত্রোপচারে রোগী মৃত্যুর অভিযোগে স্বজনেরা হট্টগোল শুরু করলে পুলিশ তাদের শান্ত করে। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যশোর সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, পিস হসপিটালের লাইসেন্স নেই। পুরোপুরি অবৈধভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ সঠিক হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, পিস হসপিটালের নাম আগে ল্যাব এইড হাসপাতাল ছিলো। স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৭ সালে শেষ হলেও হালনাগাদ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন না করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছিলো কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের ৬ আগষ্ট ল্যাব এইড হসপিটালে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য বিভাগ। অভিযানের নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মাউদ। এ সময় তার সাথে ছিলেন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সিনিয়র কনসালটেনট ডা. আব্দুর রহিম মোড়ল, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ ও আইন শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

অভিযানের সময় সেখানে ভর্তি রোগী থাকলেও দেখভালের জন্য কোনো চিকিৎসক, সেবিকা ও টেকনিশিয়ান ছিলেন না। স্বাস্থ্য নীতিমালা উপেক্ষা করে কার্যক্রম পরিচালনা করায় ল্যাব এইড হসপিটাল সিলগালা করা হয়। এরপর ল্যাব এইডের সাইনবোর্ড পাল্টে হয় পিস হসপিটাল।

রাতদিন সংবাদ

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

jashore-fish

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত