Friday, April 26, 2024

যশোরে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহন 

যশোরে জেলা হাসপাতাল ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কমিটির সভাপতি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপির সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপার জনাব প্রলয় কুমার জোয়ারদার, হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা.আখতারুজ্জামান, পৌর মেয়র হায়দার গনি খান পলাশ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন সহ হাসপাতালের অনান্য চিকিৎসকেরা।
আলোচনার প্রথমেই সভাপতি প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বলেন, বিগত সভায় গৃহীত অধিকাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে, যেগুলি বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলি আলোচনার জন্য বলেন। তত্ত্বাবধায়ক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, বহিরাগত এ্যাম্বুলেন্স পার্কিং রোধ করা যাচ্ছে না, এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাথে বসে অলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তারা সে সিদ্ধান্ত মেনে চলছে না।
বিগত সভায় আলোচিত হাসপাতালের সামনে এক মূখী রাস্তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের দেওয়াল সংলগ্ন ভ্রাম্যমান অস্থায়ী দোকান উচ্ছেদ করা দরকার। এটা হলেও হাসপাতালের সামনের রাস্তা কিছুটা জানযট মুক্ত হবে। উপস্থিত পৌর মেয়র হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, জেলখানা সংলগ্ন জায়গায় গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া হাসপাতালের সামনে এক মূখী রাস্তার বিষয়ে উপস্থিত সকলে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সভাপতি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভ্ট্রাচার্য বলেন যেহেতু হাসপাতালের সামনে এক মূখী রাস্তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না, সেহেতু প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে ট্রাফিক নজরদারি বাড়িয়ে রাস্তার দুইধারে যত্র তত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করে হাসপাতালের সামনের রাস্তা ফাকা রাখার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেন।
তত্ত্বাবধায়ক ডা.আখতারুজ্জামান বলেন, সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যমে কালেকশন করায় ক্রমান্বয়ে ইউজার ফি জমার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে, তার একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়, সামনে আশা করা যাচ্ছে ইউজার ফি জমার পরিমান আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে এক্স-রে এবং সিটি স্কান বিভাগের কিছুটা সমস্যা রয়েছে, সরকারী বরাদ্দ অনুযায়ী ফ্লিম ৮মাস চলবে বাকি চার মাস স্থানীয় ভাবে ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সে কারনে এক্স-রে এবং সিটি স্কান বিভাগের শতভাগ ইউজার ফি ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যেমে জমা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এবিষয়ে উপস্থিত সকলের মতামতের প্রেক্ষিতে সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠাতে, তিনি ডি,ও লেটার দিয়ে সহযোগিতা করবেন। যাতে করে সরকারী বরাদ্দের মাধ্যমে এক্স-রে এবং সিটি স্কান বিভাগের সারা বছরের ফ্লিম সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় এবং শতভাগ ইউজার ফি ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যেমে জমা করা যায়।
ডাঃ অবু হাসনাত মোহাম্মদ আহসান হাবিব, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এ্যানেসথেসিয়া সভাপতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন বিগত মিটিং এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইসিইউ-তে রোগীর ভর্তি ফি এবং বিছানা ভাড়া কালেকশন করে সেই টাকা দিয়ে আইসিইউ এর সব ধরনের ভর্তুকী দিয়ে সুন্দরভাবে চালানো হচ্ছে।
ইতিমধ্যে আধুনিকায়নের জন্য পর্দা ও সি. সি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিগত দুই মাস থেকে কোভিড রোগী কম থাকায় নন কোভিড রোগীও আইসিইউ-তে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক মহোদয় বলেন মূলতঃ করোনারী কেয়ার ইউনিটের চতুর্থ তলায় কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ তৈরীর নির্মান কাজ চলছে, এ,টি তৈরী হলে আশাকরা যায় সরকারীভাবে জনবলসহ সব ধরনের ফ্যাসিলিটি তৈরী হবে। সিদ্ধন্তের প্রেক্ষিতে সভাপতি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, সম্প্রতি কোভিড আবার উর্দ্ধমূখী সংক্রমনের দিকে যাচ্ছে। এটা বিবেচনায় রেখে আইসিইউ-কে শতভাগ প্রস্তুত রাখার জন্য সব ধরনের ব্যয় করার অনুমতি প্রদান করেন।
তত্ত্বাবধায়ক মহোদয় ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ অত্র হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগে কর্মরত চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীর সাথে ইন্টার্ন চিকিৎসকের আত্মীয়ের এক্স-রে করানোকে কেন্দ্র করে বিতণ্ডার যের ধরে তত্ত্বাবধায়ক মহোদয়ের অফিস কক্ষে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংঘটিত হয় তার বিস্তারিত বিবরন তুলে ধরেন এবং সভাপতি মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করতে সময় ক্ষেপন হওয়ায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এরপর তত্ত্বাবধায়ক মহোদয় বলেন অনাকাঙ্খিত ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সম্মানিত জেষ্ঠ ও দক্ষ চিকিৎসকের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদন উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ-কে অবহিত করা হয় নি। যেহেতু দুই পক্ষই মাননীয় সভাপতি মহোদয়ের সহিত সাক্ষাত করে সমাধানের আবেদন জানিয়েছেন এবং মাননীয় সভাপতি মহোদয় আজকের সভায় সমাধান করবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী প্রতিনিধি এবং ইন্টার্ন প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে।
তাদের উপস্থিতিতে মাননীয় সভাপতি মহোদয় আশাকরি সুষ্ঠু সমাধান দিবেন। সভাপতি মহোদয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি নিজে পাঠ করে শুনান এবং বলেন প্রতিবেদনে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তাদের দুই পক্ষের বর্নিত ঘটনার হুবহু মিল রয়েছে। এত করে বুঝা যায় তদন্ত খুবই সুষ্ঠু হয়েছে এবং তারা যে সুপারিশ করেছে তা যুক্তিযুক্ত হয়েছে। যে কোন প্রতিষ্ঠানই একটি পরিবারের মত বিশেষ করে হাসপাতাল এখানে একজন বাদে আরেকজন-কে ভাবাই যায় না।
এক সংসারে থাকলে অনেক কিছু হয়, সেগুলি মেনে চলতে হয়। এটা বিবেচনায় রেখে যাতে এধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি রাখবেন এবং পূর্বের ন্যায় মিলে মিশে থাকবেন। কোন কারনে যেন কোন ধরনের সেবা ব্যাহত না হয়। যেখানে এমন একটি বড় কমিটি হাসপাতালের জন্য আমরা কাজ করি, সেখানে এমন ঘটনা ঘটে যাবে কমিটি জানবে না। এটি দুঃখজনক।
উপস্থিত জেলা প্রশাসক, যশোর, অধ্যক্ষ, যশোর মেডিকেল কলেজ, সভাপতি জেলা অওয়ামীলীগ, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র এবং যশোর বিএমএ-র সভাপতির নিকট সভাপতি মহোদয় এ বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চান। এ বিষয়ে তারা বিভিন্ন মতামত প্রদান করলেও সকলে সভাপতি মহোদয়-কে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। যশোর বিএমএ-র সভাপতি বলেন আমার একটি অনুরোধ যেন চিকিৎসক সমাজের ডিগনিটি নষ্ট না হয়।
আলোচনাঃ ৪ সভাপতি মহোদয় ইন্টার্ন চিকিৎসক প্রতিনিধি ডাঃ শিহাব, ডাঃ দিহানসহ পাঁচজন। এবং তৃতীয় চতুর্থ শ্রেনী প্রতিনিধি মোঃ শাহজাহান আলী, ষ্টুয়ার্ড, মোঃ মোশারেফ হোসেন, ড্রাইভার এবং মোঃ আবুল কালাম আজাদের উপস্থিতিতে তাদের মতামত জানতে চান। প্রেক্ষিতে ইন্টার্ন  চিকিৎসক প্রতিনিধি ডাঃ শিহাব, ডাঃ দিহান বলেন তারা সভাপতি মহোদয়ের সিদ্ধান্ত মেনে  নিবেন, তবে তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশকৃত অভিযুক্ত কর্মচারীর বদলীর বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করেন।
এবং তৃতীয় চতুর্থ শ্রেনী প্রতিনিধি মোঃ শাহজাহান আলী বলেন মাননীয় সভাপতি মহোদয় যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা তা মাথা পেতে নেব, তবে সিদ্ধান্তটি যেন একপেশে না হয়, সেদিকে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।
সিদ্ধান্তঃ সভাপতি মহোদয় উপরোক্ত বিশদ আলোচনা এবং দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে নিম্নবর্নিত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন, উভয়পক্ষ লিখিতভাবে ক্ষমা প্রর্থনাসহ এধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে অঙ্গিকার প্রদান করবেন। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত কর্মচারী দিপক রায়, কার্ডিওগ্রাফার এবং মেহেদী, নিঃ প্রহরী কে সদরের যে কোন প্রতিষ্ঠানে সাময়িক বদলী করা।, ইন্টার্ন চিকিৎসক ডাঃ দিহান এর ইন্টার্নশীপ সময়কাল অতিরিক্ত ১৫ দিন বর্ধিত করা।
যশোর জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম মিলন বারডেম হাসপাতালের মত এই হাসপাতালে ফিস প্রদানের মাধ্যমে কনসালটেন্সি সার্ভিস প্রদানের পরামর্শ দেন। সরকারী হাসপাতালে এ ধরনের কোন সুযোগ নাই। প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ জাহিদ হাসান টোকন বলেন আমরা এতটাকা অনুদান সংগ্রহ করে আইসিইউ চালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি, কিন্তু দুঃখের বিষয়, ও, টি লাইটের অভাবে সিজার ব্যতিত অন্যান্য জরুরী কোন অপারেশন হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সমাজ সেবক এস. এম. জাহাঙ্গীর হোসেন খোকন একমত প্রকাশ করেন এবং একটি রোগীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন অপারেশন টেবিল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক অর্থো সাজারী বলেন বেশ কিছুদিন ও, টি লাইট ঠিক না থাকায় অপারেশন ব্যহত হয়েছে, তবে জরুরী অপারেশন কেন হচ্ছে না, অপারেশন টেবিল থেকে রোগী কেন ফেরৎ দেওয়া হয়েছে, এগুলির মেডিকেল ব্যাখ্যা আছে, অপারেশনের জন্য রোগীর শারিরীক অন্যান্য ফিটনেস না থাকলে রোগী মৃত্যু ঘটতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক মহোদয় বলেন বর্তমানে ও, টি-র সকল লাইট ঠিক আছে। সভাপতি মহোদয় গাইনীবাদে ইমার্জেন্সী ও, টি কেন হচ্ছেনা- এবিষয়টি আলোচনার জন্য বলেন। ডাঃ আবু হাসনাত মোহাম্মদ আহসান হাবিব, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এ্যানেসথেসিয়া হাসপাতালের সামনে এবং ভিতরে ইজিবাইকের ভীড়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেন।
মেইন গেইট দিয়ে রোগী এবং রোগীর লোক ব্যতিত অন্য লোক এবং রোগী ব্যতীত অন্য ইজিবাইক প্রবেশ বন্ধ করার সুপারিশ করেন। সিদ্ধান্তে সভাপতি মহোদয় ট্রাফিক ও অন্যান্য সমস্যা নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করবেন বলে মত প্রকাশ করেন।
রাতদিন সংবাদ
- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত