সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার একটি ক্লিনিকে অপারেশান থিয়েটারে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় গর্ভের সন্তানসহ শিউলী বেগম (২৫) নামে এক প্রসুতির মৃত্যুর হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তদন্তের পর উপজেলার বড়দিয়া ‘হাজি খান রওশন আলী হসপিটাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টার’ টি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
ভূক্তভোগী ও সিংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মো. জিন্নাত আলীর স্ত্রী ও কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার পেচিডুমুরিয়া গ্রামের চৌকিদার আকবর হোসেন মোল্যার মেয়ে এক সন্তানের জননী শিউলী বেগম দ্বিতীয় সন্তান সিজারের মাধ্যমে জন্মদানের জন্য শুক্রবার সকালে হাজি খান রওশন আলী হাসপাতালে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ভর্তি হন।
এদিন দুপুরে অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে সিজারের জন্য জনৈক হাতুড়ে ডাক্তার অবশজনিত ইনজেকশান দেয়ার পরই ওটিতে তার মৃত্যু হয়। মৃত শিউলীর নাকে অক্সিজেন ধরিয়ে কৌশলে মৃতদেহ এ্যাম্বুলেন্সে তুলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করলে স্বজনদের সন্দেহ হয় এবং তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সেসময় ক্লিনিক মালিকের ডাকে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আসে। পুলিশ এলে কথিত হাতুড়ে ডাক্তার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় । স্বজনরা হাতুড়ে ডাক্তারের অনভিজ্ঞতার কারনে গর্ভের সন্তানসহ প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। পরে দরিদ্র ইজিবাইক চালক জিন্নাত আলী ৪ বছরের মেয়ে জামিলার বিষয়ে চিন্তা করে মিমাংশা করতে রাজি হন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে পুলিশের উপস্থিতিতে শালিশ বেঠকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় নিস্পত্তির পর রাতেই শিউলীকে তার শ্বশুর বাড়িতে দাফন করা হয়। এর পরই হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে কর্মকর্তা কর্মকর্মচারিরা পালিয়ে যায়। ঘটনাটি জানতে পেরে নড়াইলের সিভিল সার্জন শনিবার কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিককে প্রধান করে কালিয়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবাদুল গনি ও ডা. সুজয় রায়কে সদস্য করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
তদন্ত কমিটি রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ জিন্নাত আলী বাড়িতে গিয়ে তার জবানবন্দি গ্রহনসহ বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. কাজল মল্লিক বলেছেন, রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ঘটনার তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে অননুমোদিত ওই ক্লিনিকে নিয়মিত কোন ডাক্তার বা সেবিকা থাকার প্রমান মেলেনি। একটি ক্লিনিক বা হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যে সকল শর্তাবলী রয়েছে সেখানে তার কোনটিই নেই। ক্লিনিকটিতে মালিক পক্ষের কোন লোকজন না পাওয়ায় কথিত হাতুড়ে ডাক্তারের পরিচয় জানা যায়নি। সেখানে রক্ষিত ডাক্তারদের নামের বিলবোর্ডে যাদের নাম রয়েছে তারা কোন ধরনের চিকিৎসক তাও জানা যায়নি।
হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের মত গুরুত্বপূর্ন অপারেশান মোটেই আইন সিদ্ধ নয়। তাই স্বাস্থ্য সেবার অনুপযোগী ওই অনুমোদনহীন ক্লিনিকটিকে বন্ধের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।
- Advertisement -